Monday, December 1, 2025

সঞ্জয়ের ফাঁসির শাস্তি চেয়ে রাজ্যের আবেদন, আপত্তি জানাল সিবিআই! আদালতে পাল্টা যুক্তি পেশ করলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল

Share

সঞ্জয়ের ফাঁসির শাস্তি চেয়ে রাজ্যের আবেদন

আরজি কর-কাণ্ডে শিয়ালদহ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রাজ্য সরকারের আবেদন নিয়ে সিবিআই এবং রাজ্যের মধ্যে আইনি লড়াই চরমে উঠেছে। সিবিআই প্রশ্ন তুলেছে, দোষীর ফাঁসির শাস্তি চেয়ে রাজ্য সরকারের এই আবেদন আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না। অন্যদিকে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এই আবেদনের বৈধতা নিয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।

শিয়ালদহ আদালতের রায় এবং তার প্রেক্ষাপট

সোমবার শিয়ালদহ আদালত আরজি কর-কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি ঘোষণা করে। বিচারক অনির্বাণ দাস তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, এই মামলাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায়ের সঙ্গে একমত নন। তিনি সঞ্জয়ের অপরাধকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে দাবি করে তাঁর ফাঁসির শাস্তির দাবি তোলেন। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছিলেন যে, শিয়ালদহ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য হাই কোর্টে যাবে।

সিবিআইয়ের আপত্তি

বুধবার হাই কোর্টের শুনানিতে সিবিআই-এর ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য সরকার কীভাবে এমন একটি আবেদন করতে পারে। তাঁর যুক্তি, নির্যাতিতার পরিবার, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা অভিযুক্ত যদি আদালতের শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল না করে, তবে রাজ্যের পক্ষে এ ধরনের আবেদন করা অযৌক্তিক। উদাহরণ হিসেবে তিনি লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সেই মামলায় রাজ্যের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি দাবি করেন, বর্তমান মামলার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত।

রাজ্যের যুক্তি: আবেদন বৈধ এবং যৌক্তিক

সিবিআইয়ের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এবং সরকারি কৌঁসুলি দেবাশিস রায়। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, এই মামলাকে লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার সঙ্গে তুলনা করা সম্পূর্ণ ভুল। তাঁরা সিআরপিসি ৩৭৭ এবং ৩৭৮ ধারা অনুযায়ী যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেন যে, রাজ্য সরকার এই ধরনের আবেদন করার অধিকার রাখে।

অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে জানান, তদন্ত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্যের অন্যতম দায়িত্ব। আরজি কর-কাণ্ডের প্রাথমিক তদন্ত রাজ্য পুলিশের অধীনেই হয়েছিল। পরে তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়। এ কারণে রাজ্যের এই আবেদন আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত বলে তাঁরা দাবি করেন।

মামলার বর্তমান অবস্থা

রাজ্যের আবেদন গ্রহণযোগ্য কি না, তা নিয়ে আগামী সোমবার হাই কোর্টে শুনানি হবে। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থান

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় শুরু থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এই অপরাধকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে দাবি করেছেন এবং দোষীর ফাঁসির শাস্তি চেয়ে আগেও পথে নেমেছিলেন। সোমবার শিয়ালদহ আদালতের রায় ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টতই জানান, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে রাজ্য হাই কোর্টে যাবে।

জনমত এবং রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনা শুধু আদালতের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। রাজ্যজুড়ে জনমতের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে দোষীর ফাঁসির শাস্তি দাবি করে রাজ্যের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। আবার সিবিআইয়ের আপত্তি এবং যুক্তির ভিত্তিতেও বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।

আগামী দিনের সম্ভাব্য রূপ

সোমবারের শুনানিতে হাই কোর্ট কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপর নির্ভর করবে এই আইনি লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ। তবে রাজ্যের এবং সিবিআইয়ের এই বিতর্ক শুধু একটি মামলার বিচারই নয়, বরং রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার সম্পর্ক, আইনের প্রভাব এবং সামাজিক ন্যায়ের ধারণার উপর গুরুত্বপূর্ণ আলো ফেলবে।

এই মামলা প্রমাণ করছে যে, ন্যায়বিচারের জন্য আইনের প্রতিটি দিকের সঠিক প্রয়োগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে দোষীর শাস্তি আরও কঠোর হতে পারে। আর তা না হলে এই মামলার আলোচনায় নতুন দিক উন্মোচিত হবে।

আইএসএলে প্লে-অফের স্বপ্ন ভঙ্গ, ইস্টবেঙ্গল কোচের দুঃখপ্রকাশ

Read more

Local News