ধ্রুপদী ভাষা বাংলা
বাংলা ভাষা শুধু আমাদের মাতৃভাষা নয়, এটি আমাদের গর্ব, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের পরিচয়। বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার পর থেকে শহরে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার কলকাতা পুরসভা আরও এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিল। পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে শহরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, দোকানপাট থেকে শুরু করে অফিস, সর্বত্র বাংলার গুরুত্ব যেন মাথায় রাখা হয়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে এবার মেয়র পারিষদরাও এগিয়ে এলেন।
সম্প্রতি, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদরা তাঁদের ঘরের বাইরের নামফলকে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু করেছেন। দেবাশিস কুমার, দেবব্রত মজুমদার, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, সন্দীপন সাহা, সন্দীপ বক্সী— এই সমস্ত বাঙালি মেয়র পারিষদরা নিজেরাই বাংলা ভাষার প্রচারে উদাহরণ তৈরি করেছেন। এমনকি, বেহালার ১১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত অবাঙালি মেয়র পারিষদ তারক সিংহও তাঁর ঘরের বাইরে বাংলায় নামফলক লাগিয়েছেন। এটি কেবল একটি পদক্ষেপ নয়, বরং শহরের ভাষাগত পরিচয় সংরক্ষণে একটি বড় পদক্ষেপ।

বাংলা নামফলকের গুরুত্ব
কলকাতা পুরসভার এই উদ্যোগে শুধু মেয়র পারিষদদের ঘরের বাইরে নয়, ভবিষ্যতে পুরসভার সব আধিকারিকের ঘরের বাইরে বাংলায় নামফলক লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এক পুরসভা আধিকারিকের কথায়, “শহরের বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি এমন মনোভাব শহরবাসীর মধ্যে গর্বের অনুভূতি তৈরি করবে।” এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অবশ্য, মেয়র, ডেপুটি মেয়র এবং মুখ্য সচেতকের ঘরের বাইরে আগে থেকেই বাংলায় নামফলক ছিল। তবে মেয়র পারিষদদের এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই উদ্যোগ আরও শক্তিশালী হল। এটি শুধুমাত্র একটি নামফলক স্থাপন নয়, বরং আমাদের ভাষার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরার এক প্রচেষ্টা।
পুরসভার দৃষ্টান্ত এবং শহরের বার্তা
শুধু কলকাতা পুরসভা নয়, এই উদ্যোগ শহরের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি বার্তা বহন করে। শহরের প্রতিটি মানুষ যদি তাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ভাষার গুরুত্ব দেয়, তবে আমাদের ভাষার মর্যাদা আরও উজ্জ্বল হবে।
এ বিষয়ে পুরসভার একজন আধিকারিক বলেন, “শহরের দোকানপাট থেকে শুরু করে অফিস— সর্বত্র বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়া হলে তা ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে।” এছাড়া, ফিরহাদ হাকিম শহরের দোকানগুলির নাম বাংলায় লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা শহরবাসীর মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে।
বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া
ফিরহাদ হাকিমের এই উদ্যোগকে শহরের বিশিষ্টজনেরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বাংলা ভাষার প্রতি এই মনোভাব শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে গর্ববোধ তৈরি করবে। বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং শহরের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষা যদি তার নিজস্ব শহরেই প্রাধান্য হারায়, তবে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাই, শহর জুড়ে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর এই উদ্যোগ শুধু ভাষার প্রচার নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতির প্রতি একটি বড় দায়িত্ব পালন।
ভবিষ্যতের দিকে নজর
বাংলার এই প্রচার ভবিষ্যতে শহরের ভাষাগত পরিচয় সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মেয়র পারিষদদের এই পদক্ষেপকে যদি আরও প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রসারিত করা যায়, তবে শহরের প্রতিটি কোণে বাংলার উপস্থিতি আরও সুদৃঢ় হবে।
বাংলা ভাষা শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের ইতিহাসের, সাহিত্যের, এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুরসভার এই উদ্যোগ শুধু একটি নামফলক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়; এটি আমাদের গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য, এবং আমাদের পরিচয়।
কুম্ভমেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছড়াল আতঙ্ক, পুড়ল একাধিক তাঁবু

