Monday, December 1, 2025

আরজি কর-কাণ্ডে রায় ঘোষণার অপেক্ষা: কী শাস্তি হবে দোষী সঞ্জয়ের?

Share

আরজি কর-কাণ্ডে রায় ঘোষণার অপেক্ষা

শিয়ালদহ আদালতে সোমবার দুপুরে ঘোষণা করা হবে আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের শাস্তি। বিচারক অনির্বাণ দাস দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে এজলাস বসাবেন। প্রথমে সঞ্জয়ের বক্তব্য এবং তাঁর আইনজীবীর দাবি শোনা হবে। এরপর নির্যাতিতার পরিবারের কথা শোনা হবে। এর পরই বিচারক শাস্তি ঘোষণা করবেন।

দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়: অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ

শনিবার, আদালত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে জানিয়েছে যে, গত ৯ অগস্ট ভোরে তিনি আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি এক মহিলা চিকিৎসককে যৌন হেনস্থা করেন এবং গলা টিপে তাঁকে হত্যা করেন। তদন্তকারী সংস্থা এবং সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজেও সঞ্জয়ের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে। সেমিনার হলে প্রবেশের সময় তাঁর গলায় ব্লুটুথ হেডফোন ছিল, যা বেরোনোর সময় তাঁর সঙ্গে আর দেখা যায়নি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সেই ছেঁড়া হেডফোন উদ্ধার করে।

সঞ্জয়ের দাবী: ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে’

শনিবার আদালতে সঞ্জয় দাবি করেন যে, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। চিৎকার করে তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরি, এরকম জঘন্য অপরাধ করতে পারি?” তিনি আরও দাবি করেন যে, যদি তিনি এই কাজ করতেন, তবে তাঁর রুদ্রাক্ষের মালা ছিঁড়ে যেত।

সঞ্জয়ের এই বক্তব্য নতুন একটি তত্ত্ব হিসেবে উঠে এলেও, তদন্তের সময় বা সিবিআইয়ের চার্জশিটে রুদ্রাক্ষের মালার প্রসঙ্গ কখনও আসেনি। বিচারক তাঁর এই বক্তব্য শোনার জন্য সোমবার সময় দেন।

নির্যাতিতার পরিবারের প্রতিক্রিয়া

শনিবার, সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার পর, নির্যাতিতার বাবা-মা আদালতে কেঁদে ফেলেন। তাঁরা বিচারকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “বিচারক আমাদের আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন।” তবে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। সোমবার আদালত তাঁদের এই সন্দেহের বিষয়েও কথা শুনবেন।

রায় ঘোষণা: যাবজ্জীবন নাকি মৃত্যুদণ্ড?

সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে যে ধারাগুলি প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারক শনিবারই জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে তাঁর অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে নাকি মৃত্যুদণ্ড, তা সোমবারই স্পষ্ট হবে।

রুদ্রাক্ষের মালা: অপ্রাসঙ্গিক তত্ত্ব?

সঞ্জয়ের আইনজীবীর দাবি, তাঁর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা এবং সিবিআইয়ের চার্জশিটে এই বিষয়টি উল্লেখ নেই। সঞ্জয়ের গ্রেফতারির সময়ও পুলিশ এ নিয়ে কিছু বলেনি। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী অমর্ত্য দে এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এটা যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হত, তবে তদন্তের সময় বা চার্জশিটে এটি উল্লেখ করা হতো। এখন এটি কেবল বিভ্রান্তি তৈরির একটি চেষ্টা।”

তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার গতি

মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হওয়ার পরদিনই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। পরে এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিবিআই তাঁদের চার্জশিটে সঞ্জয়কেই একমাত্র অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই সঞ্জয়ের দোষ প্রমাণিত হয়েছে।

নির্যাতিতার পরিবার ও চিকিৎসক মহলের দাবি

এই ঘটনায় বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চিকিৎসক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। নির্যাতিতার সহকর্মী এবং চিকিৎসক সমাজ শাস্তি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই একমাত্র উপায়, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।

উপসংহার

সোমবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালতের রায়ে সঞ্জয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। এই মামলার প্রতিটি পদক্ষেপ নজর কেড়েছে। সমাজের কাছে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বার্তা প্রয়োজন। শাস্তি ঘোষণার পর এই ঘটনায় ন্যায়বিচার পূর্ণ হবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

কুম্ভমেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছড়াল আতঙ্ক, পুড়ল একাধিক তাঁবু

Read more

Local News