Monday, December 1, 2025

কোটায় পড়ুয়ারা বার বার আত্মঘাতী কেন? মন্ত্রীর বক্তব্যে প্রেম-অবসাদ এবং অভিভাবকদের জন্য সতর্কবার্তা

Share

কোটায় পড়ুয়ারা বার বার আত্মঘাতী কেন?

রাজস্থানের কোটা, যা দেশের অন্যতম বড় শিক্ষার কেন্দ্র, দিন দিন পড়ুয়াদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান দিয়ে দুঃখজনকভাবে খবরের শিরোনামে উঠে আসছে। ২০২৪ সালে এখানে ১৭ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০২৫ সালের এখনও একটি মাসও পূর্ণ হয়নি, অথচ ইতিমধ্যে চার জন পড়ুয়ার প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছে। কেন এই সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে? এর পেছনে কী কারণ রয়েছে?

সম্প্রতি রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ার এ বিষয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন। তাঁর মতে, পড়ুয়াদের মানসিক চাপ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কজনিত সমস্যাই এই ঘটনার মূল কারণ। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, অভিভাবকদের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁদের আরও সচেতন হতে হবে।

কোটার চাপা বাস্তবতা

কোটায় প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং নিতে আসেন। এই শহরটি উচ্চমানের কোচিং সেন্টারের জন্য বিখ্যাত হলেও, এখানকার পড়ুয়ারা চরম মানসিক চাপের মুখোমুখি হন। প্রতিযোগিতার তীব্রতা, কঠিন সিলেবাস, পরিবার থেকে দূরে থাকা এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েন অনেক সময় পড়ুয়াদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।

২০২৪ সালে কোটায় ১৭ জন পড়ুয়া আত্মঘাতী হন। আর ২০২৫ সালে, মাত্র ১৯ দিনের মধ্যেই ৪ জন পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছেন। দিন দিন এই পরিসংখ্যান বাড়ছে এবং এটি কোটার শিক্ষাব্যবস্থার অন্ধকার দিককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

মন্ত্রীর মতামত: প্রেম ও অবসাদের প্রভাব

একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ার এই সমস্যার মূল কারণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেন। তাঁর মতে, ছাত্রছাত্রীদের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার ফলে তাঁদের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। মন্ত্রী বলেন, “সন্তানদের নিজস্ব আগ্রহ এবং ইচ্ছেগুলিকে সম্মান জানানো উচিত। তাদের উপর চাপ দিলে তারা অবসাদে ডুবে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে প্রেমজনিত সমস্যা এবং ব্যক্তিগত আবেগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

তিনি আরও জানান, সন্তানদের বাইরে পড়তে পাঠানোর পর অনেক অভিভাবক তাঁদের খবর রাখেন না। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা এবং তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা খুবই জরুরি।

কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকদের ভূমিকা

শুধু অভিভাবক নয়, শিক্ষকদেরও বাড়তি সতর্ক হতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। কোটার কোচিং সেন্টারগুলিতে একাধিক পড়ুয়া প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা হতে পারে ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানো, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা।

কিছু কোচিং সেন্টার ইতিমধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে এই উদ্যোগ এখনও পর্যাপ্ত নয়। ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক উন্নতিতে সাহায্য করাও শিক্ষকদের দায়িত্ব।

অভিভাবকদের কী করণীয়?

মন্ত্রী মদন দিলাওয়ার বিশেষভাবে জোর দেন অভিভাবকদের ভূমিকায়। তিনি বলেন, “সন্তানদের মানসিক অবস্থা বোঝা এবং তাঁদের পাশে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উপর চাপ না দিয়ে, ভালোভাবে বোঝা উচিত যে সন্তান কী চায় এবং কোন পথে যেতে চায়।”

অভিভাবকদের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, তাঁদের অনুভূতি জানার চেষ্টা করতে হবে এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলিতে সন্তানদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে

সমাধানের পথ কোথায়?

কোটার পড়ুয়াদের আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারের, কোচিং সেন্টারের, শিক্ষকদের এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

  • মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা: পড়ুয়াদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশনের ব্যবস্থা করা উচিত।
  • সচেতন অভিভাবকত্ব: সন্তানদের মানসিক চাহিদা বুঝে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং চাপমুক্ত রাখতে অভিভাবকদের আরও যত্নশীল হওয়া দরকার।
  • কোচিং সেন্টারগুলির ভূমিকা: কঠোর প্রতিযোগিতার পরিবেশের পরিবর্তে, পড়ুয়াদের জন্য একটি সহানুভূতিশীল এবং সাহায্যকারী পরিবেশ তৈরি করা দরকার।

কোটার এই চক্র ভাঙতে হলে সকল পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ছাত্রজীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মহাকুম্ভের ‘মোনালিসা’র খ্যাতি নিয়ে বিরক্তি! কেন বললেন, ‘দিনভর ছবি তুলতে ব্যস্ত’?

Read more

Local News