Monday, December 1, 2025

“ধর্ষণ-খুন মামলায় রায় ঘোষণার পর কেঁদে ফেললেন নির্যাতিতার বাবা, বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে কী বললেন?”

Share

নির্যাতিতার বাবা, বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে কী বললেন?

শনিবার শিয়ালদহ আদালত এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছে, যা অনেকদিন পর একটি দীর্ঘ ও লম্বা আইনি লড়াইয়ের শেষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। তিনি আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে সিবিআই অনেক দিন আগে অভিযোগ এনেছিল, এবং শনিবার আদালতের রায় ঘোষণার পর একটি আবেগঘন দৃশ্য দেখা যায়, যখন নির্যাতিতার বাবা আদালতে কেঁদে ফেলেন এবং বিচারককে ধন্যবাদ জানান।

কেঁদে ফেললেন নির্যাতিতার বাবা

রায় ঘোষণার পর, যখন বিচারক নিজের আসন ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ শোনা যায় কান্নার শব্দ। কাঁপতে কাঁপতে নির্যাতিতার বাবা বিচারকের দিকে চলে যান এবং তাঁর হাতে হাতজোড় করে কিছু বলতে চান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘আপনার উপর যে আস্থা রেখেছিলাম, তার পূর্ণ মর্যাদা রেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’’ এই দৃশ্যটি আদালতে উপস্থিত সবাইকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। বিচারকও নির্যাতিতার বাবাকে শান্ত থাকার জন্য বলেন এবং ধৈর্য ধরে তাঁর কথা বলার সুযোগ দেন।

বিচারক পরে জানিয়ে দেন, “আপনারা যা বলবেন, সেটা সোমবার শুনব। সোমবার সাজা ঘোষণা করা হবে।” নির্যাতিতার বাবা ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আপনি সত্যি আমাদের আস্থা রেখেছেন।’’

অভিযোগ এবং রায়

শুক্রবার নির্যাতিতার বাবা আদালতকে জানান, তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন, কারণ অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও তাঁর কাছে আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘বিচার পেলে খুব খুশি হব, তবে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।’’ তাঁর গলায় ছিল ক্ষোভ এবং হতাশা, কারণ এতদিন পরও পুরো ঘটনা পরিষ্কার হয়নি। তবে রায়ের পরে তাঁর গলায় ছিল শান্তির এক ধারা, কারণ তিনি আদালতের ওপর ভরসা রেখেছিলেন এবং সেই বিশ্বাস আজ পূর্ণ হয়েছে।

এই মামলায় সিবিআই সঞ্জয় রায়কে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সঞ্জয়কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারায় ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু), এবং ১০৩ (১) (খুন) দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেছেন, তবে সাজা ঘোষণা হবে সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫।

সঞ্জয়ের প্রতিক্রিয়া

সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আদালতে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমি কিছু করিনি, আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে, আমি শান্তিপূর্ণ মানুষ। আমাকে একটু শুনুন।’’ তবে বিচারক তাঁকে শান্তিপূর্ণভাবে বলেন, ‘‘আপনার বক্তব্য আমরা সোমবার শুনব।’’ সঞ্জয়ের কথায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করছেন না এবং চেষ্টা করছেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। তবে, আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং সোমবারই তার শাস্তি ঘোষণা করা হবে।

বিচারক এবং সিবিআইয়ের ভূমিকা

বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করার পর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘সিবিআই এবং সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে যে প্রমাণ মেলেছে, তাতে আমি আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছি। আপনার শাস্তি সর্বোচ্চ হতে পারে, এবং সেটা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।’’ বিচারকের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে শুধু নির্যাতিতার পরিবারই নয়, পুরো আদালতকেও এক ধরনের আধ্যাত্মিক শান্তি অনুভূত হয়।

একটি দীর্ঘ আইনি যাত্রা

এই মামলার সঙ্গেই এক দীর্ঘ আইনি যাত্রার সমাপ্তি ঘটল। বহু মাস ধরে চলা এ মামলা মানুষের মনে এক তীব্র আশঙ্কা ও হতাশার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু অবশেষে ন্যায় বিচার হয়েছে এবং এই রায়ের মাধ্যমে এক ধরনের বিশ্বাস ফেরানো গেল মানুষের মনে। বিচারকের তৎপরতা, সিবিআইয়ের যথাযথ তদন্ত এবং নির্যাতিতার পরিবারের দৃঢ় মনোবল, সব মিলিয়ে বিচার প্রক্রিয়া এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করল।

এই রায় আরও একবার প্রমাণ করল যে, আইনের সামনে সবার সমান অধিকার রয়েছে এবং শেষমেশ ন্যায় নিশ্চিত হয়।

আরজি কর মামলায় সঞ্জয়ের চিৎকার: গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, তাই অপরাধ নয়!

Read more

Local News