Monday, December 1, 2025

বাংলাদেশ পালানোর মরিয়া চেষ্টায় পুলিশের গুলিতে নিহত সাজ্জাক! কীভাবে ঘটল ‘এনকাউন্টার’?

Share

পুলিশের গুলিতে নিহত সাজ্জাক!

খুনের মামলায় অভিযুক্ত সাজ্জাক আলম, যিনি ইসলামপুর আদালত থেকে রায়গঞ্জ জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশকে গুলি করে পালিয়েছিলেন, অবশেষে পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর থানার সাহাপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীপুর এলাকায়। সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পালানোর মরিয়া চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে সাজ্জাক নিহত হন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এবং পুলিশের অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

ঘটনার প্রেক্ষাপট: সাজ্জাকের পালানোর পরিকল্পনা

গত বুধবার, সাজ্জাক ইসলামপুর আদালত থেকে রায়গঞ্জ জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত করে। শৌচালয়ে যাওয়ার অজুহাতে গাড়ি থামিয়ে, দুই পুলিশকর্মী নীলকান্ত সরকার ও দেবেন বৈশ্যের উপর অতর্কিতে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এই ঘটনায় দুই পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

তদন্তে উঠে আসে, সাজ্জাকের হাতে যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল, তা ইসলামপুর কোর্ট লকআপেই তাকে সরবরাহ করা হয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ, আরেক অভিযুক্ত আব্দুল হুসেন এই অস্ত্র সাজ্জাকের হাতে তুলে দেয়। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

সাজ্জাক

পুলিশের তৎপরতা এবং এনকাউন্টার

দুই পুলিশকর্মী আহত হওয়ার ঘটনার পর, রাজ্য পুলিশের উপরমহল থেকে কড়া বার্তা আসে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। ডিজি রাজীব কুমার আহত পুলিশকর্মীদের দেখতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পুলিশ এই ঘটনার জবাব দেবে। তিনি বলেছিলেন, “যদি দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি গুলি চালায়, পুলিশ চারটি গুলি চালাবে।”

এই বার্তার পরেই সাজ্জাককে ধরতে ব্যাপক তল্লাশি শুরু হয়। পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তার গতিবিধি শনাক্ত করে। শেষমেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম শ্রীপুরে সাজ্জাকের অবস্থান চিহ্নিত হয়।

শুক্রবার রাতেই তিনটি গ্রাম ঘিরে ফেলে পুলিশ। শনিবার ভোরে সীমান্তের দিকে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। পালানোর শেষ মুহূর্তে সাজ্জাক পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়, এবং তাতে সাজ্জাক গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত লোধন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা এবং প্রশাসনের চাপ

পুলিশের দাবি, সাজ্জাক বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এই তথ্য সামনে আসার পরই প্রশাসনের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক এবং পরিস্থিতিতে এমন একটি ঘটনার ভুল বার্তা যেতে পারে, যা পুলিশ প্রশাসন সহজে এড়িয়ে যেতে পারেনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তৎপর হয় পুলিশ।

সাজ্জাক ও তার সহযোগী আব্দুলের বিরুদ্ধে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশের বিশেষ দল গঠন করা হয়। অভিযানের ফলশ্রুতিতে সাজ্জাককে ধরতে সক্ষম হলেও আব্দুল এখনও অধরা। তার খোঁজে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জনমতের প্রতিক্রিয়া

সাজ্জাকের পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করা হচ্ছে, অন্যদিকে, এনকাউন্টারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। পুলিশের দাবি, সাজ্জাক আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালালে, তারা পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তবে মানবাধিকার কর্মীরা এর নেপথ্যে কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন।

পুলিশের বার্তা: সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি

রাজ্য পুলিশের ডিজি এই ঘটনার পরে বলেছেন, “পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যারা আইন ভাঙবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পুলিশ প্রশাসন দেখাতে চেয়েছে যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধীদের ধরতে তারা কতটা সক্রিয়। সাজ্জাকের মৃত্যু হয়তো পুলিশি তৎপরতার একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়াবে, তবে এটি মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলতে থাকবে—কেন এমন চরম পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়েছিল?

৩১ জানুয়ারি শুরু বাজেট অধিবেশন: মোদী সরকারের তৃতীয় দফার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন নির্মলা সীতারামন

Read more

Local News