অষ্টম পে কমিশন- কেন্দ্রীয় পিওনের দ্বিগুণ বেতন হতে পারে আইটি কর্মীর!
অষ্টম পে কমিশনের অনুমোদন দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এই কমিশন চালুর ফলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি শুধু নিশ্চিত নয়, বরং তা এমন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে যা ভারতের বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের আয়কেও ছাপিয়ে যেতে পারে। এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বেতন কাঠামো নিয়ে জোর চর্চা।
অষ্টম পে কমিশনের প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, অষ্টম পে কমিশন চালু হলে কেন্দ্রীয় চতুর্থ শ্রেণির (গ্রুপ ডি) কর্মচারীর বেতন চাকরি জীবনের শুরুতেই নামী আইটি সংস্থার কর্মীর বেতনের তুলনায় বেশি হতে পারে। এখন ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় চাকরির ন্যূনতম বেসিক পে (মূল বেতন) ৫০ হাজার টাকার বেশি হতে পারে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (বেতন বৃদ্ধির একটি মাপকাঠি) ২.৫৭ থেকে বাড়িয়ে ২.৮৬ করার প্রস্তাব রয়েছে। এটি কার্যকর হলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের বেতন ১৮৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
পেনশনভোগীদের জন্য সুখবর
এই কমিশনের সুফল শুধু চাকরিজীবী কর্মচারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও এর সুবিধা পাবেন। বর্তমানে একজন অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কর্মচারীর ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা হলেও, অষ্টম পে কমিশনের ফলে তা বেড়ে ২৫,৭৪০ টাকায় পৌঁছাতে পারে।
বেসরকারি এবং সরকারি বেতনের তুলনা
বর্তমানে একজন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী চাকরির শুরুতে মাসিক ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা বেতন পান। গত কয়েক বছরে এই বেতন কাঠামোতে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় পে কমিশনের আওতায় কর্মীদের ন্যূনতম মূল বেতনই ৫১,৪৮০ টাকা হতে পারে। এর সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), বাড়িভাড়া ভাতা (এইচআরএ), এবং অন্যান্য সুবিধা যুক্ত হলে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেতন সহজেই ৬০,০০০ টাকা ছাড়াতে পারে।
এই বৈষম্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা। অনেকে বলছেন, সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ বাড়বে, যা ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করবে।
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব
বেতন বৈষম্যের ফলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি এবং বেসরকারি কর্মীদের আয়ের এই ব্যবধান ঘরোয়া বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে পারে এবং চাকরির ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির আকর্ষণ কমতে পারে।
অন্যদিকে, তরুণ প্রজন্ম উচ্চ বেতনের আশায় বিদেশমুখী হতে পারে, যা মস্তিষ্কের নির্গমন (ব্রেন ড্রেন) সমস্যাকে তীব্র করবে।
ভারতের গড় আয় এবং বর্তমান পরিস্থিতি
ভারতীয় নাগরিকদের গড় বার্ষিক আয় ১.৮ লাখ টাকা। মাসিক গড় বেতন দাঁড়ায় ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে। এর তুলনায় অষ্টম পে কমিশনের অধীনে কর্মচারীদের বেতন বহুগুণ বেশি হবে।
সমাধানের পথ কী?
বেতন বৈষম্য কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আসন্ন বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই বিষয়ে নতুন কিছু ঘোষণা করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অষ্টম পে কমিশনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হতে চলেছে। তবে, এর সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

