বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্পকে নিশানা করলেন বাইডেন
বিদায়ী ভাষণে স্পষ্ট ইঙ্গিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে আঙুল তুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও উত্তরসূরির নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি, তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তা ছিল তীক্ষ্ণ। বাইডেন জানান, আমেরিকা এমন একটি সময়ের দিকে এগোচ্ছে যেখানে বিপুল সম্পদ এবং ক্ষমতার দাপট নিয়ে এক অভিজাত গোষ্ঠীর শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। বিদায়বেলার এই ভাষণে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক সময়’
বুধবার ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘‘আমাদের দেশ বিপুল ক্ষমতা ও সম্পদশালী গোষ্ঠীর কবলে পড়তে চলেছে। এটি আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য গভীর সংকটের কারণ হতে পারে। মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার উপর আঘাত এলে আমরা সবাই দায়ী থাকব। আমাদের একত্রিত হয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’’
বাইডেনের ভাষণে বারবার উঠে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রতি সন্দেহ এবং শঙ্কার কথা। তাঁর মতে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে, এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হবে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্ন
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে তাঁর প্রশাসনের ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে বাইডেন জানান, এই নীতিগুলো ট্রাম্প প্রশাসন অনুসরণ করবে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু নতুন প্রশাসন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।’’
কমলা হ্যারিস ও দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ
বাইডেনের ভাষণে উঠে আসে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর দলের অন্দরমহলের ঘটনাগুলোর কথাও। গত বছরের শিকাগোয় ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে বাইডেন নিজেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম সুপারিশ করেছিলেন। তবে সম্প্রতি একাধিক জায়গায় তাঁর কণ্ঠে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছে।
১০ জানুয়ারি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাইডেন বলেন, ‘‘আমি মনে করি, ট্রাম্পকে হারানোর সামর্থ্য আমার ছিল। আমি বিশ্বাস করি, কমলাও ট্রাম্পকে হারাতে পারতেন।’’ কিন্তু বাস্তবতা বলছে, নির্বাচনের ফলাফল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে যায়নি। ইলেক্টোরাল কলেজে বিপুল ব্যবধানে (৩১২-২২৬) ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন।
গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণের ভূমিকা
বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ শুধু ভবিষ্যৎ প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিত করেই থেমে থাকেনি। আমেরিকার নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষা করা শুধুমাত্র প্রশাসনের দায়িত্ব নয়। এটি প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। আমরা যদি একত্রিত হয়ে কাজ করি, তবে এই চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব।’’
রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ নিয়ে মার্কিন রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের একাংশ তাঁর কথার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাইডেনের মন্তব্য পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিভাজনমূলক।
নতুন অধ্যায়ের সূচনা
২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন। বাইডেনের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। তবে বিদায়ী ভাষণের মাধ্যমে বাইডেন দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে গেলেন। তাঁর মতে, আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতন হওয়া এবং গণতন্ত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
আমেরিকার গণতন্ত্র এবং ভবিষ্যৎ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক যতই তীব্র হোক না কেন, বাইডেনের ভাষণ ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে থেকে যাবে।
‘আইআইটি বাবা’: সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে এক যুবা ইঞ্জিনিয়ারের যাত্রা