দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছিল এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে, এবং অবশেষে পুলিশের চেষ্টায় বুধবার, তাঁর নিজস্ব বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইওলকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও টানাপড়েনের ঘটনা ঘটে, যা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে।
ইওল এক সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তবে সামরিক আইন জারি করার চেষ্টা করার কারণে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এর আগে পুলিশ তাঁর বাসভবনে একবার হানা দিয়েছিল, কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তাঁরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারেননি। সেই সময়েও ইওলের নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। বুধবারও তেমনই এক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন পুলিশ আবার তাঁর বাসভবনে হানা দেয় এবং কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁকে আটক করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারির আগের ঘটনা
ইওল, ৩ ডিসেম্বর, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর দাবি ছিল, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের সহায়তায় বিরোধী শক্তি ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছিল, এবং সেই কারণে দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সামরিক আইন জারি করা প্রয়োজন। তবে বিরোধীরা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে। তাদের অভিযোগ ছিল যে, সামরিক আইন জারি করে ইওল দেশটির রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার ক্ষুন্ন করতে চাইছেন।
এরপরই জাতীয় সংসদে তাঁর বরখাস্তের দাবিতে এক প্রস্তাব উঠেছিল, এবং ১৪ ডিসেম্বর, ভোটাভুটিতে ইওলকে বরখাস্ত করার পক্ষে অধিকাংশ সদস্য ভোট দেন। যদিও ইওল তাঁর উপর চাপ সৃষ্টির এই ঘটনাকে আইনের শাসন ভেঙে ফেলা বলে মন্তব্য করেছিলেন, তিনি দাবি করেন যে, তিনি সবসময়ই তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ছিলেন।

ইওলের গ্রেফতারি ও আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া
ইওলের আইনজীবী অবশ্য বলেন যে, ইওল বুধবারই নিজেই দুর্নীতি তদন্ত অফিসে (CIO) হাজির হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তার আগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আইনজীবী আরও জানান, এই গ্রেফতারি দেশের জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করবে না, কারণ তিনি নিজেই তদন্তে সহায়তা দিতে চেয়েছিলেন।
এদিকে, পুলিশ জানায় যে, ইওলকে গ্রেফতার করা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তা মূলত সামরিক আইন জারি করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা এক ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।
বিরোধীদের সমালোচনা
ইওলের এই পদক্ষেপ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলগুলো তীব্র সমালোচনা করেছে। তাঁদের মতে, ইওলের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি দেশের আইনের শাসন ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
উপসংহার
ইউন সুক-ইওলকে গ্রেফতার করা এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে। সবারই এখন মনে হচ্ছে, এই ঘটনার পর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, এবং আইনের শাসন কতটা শক্তিশালী থাকবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারির সিদ্ধান্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

