Monday, December 1, 2025

বাংলাদেশে ‘একনায়কতন্ত্র রুখতে’ দ্বিকক্ষ আইনসভা! সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ইউনূসের কাছে

Share

বাংলাদেশে ‘একনায়কতন্ত্র রুখতে’ দ্বিকক্ষ আইনসভা!

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ আসতে চলেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন এমন কিছু প্রস্তাব দিতে চলেছে, যা দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রস্তাবগুলো জমা দেওয়া হবে বুধবার।

দ্বিকক্ষ আইনসভার প্রস্তাব

‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হতে পারে। বর্তমানে দেশের সংসদ এককক্ষবিশিষ্ট, যেখানে ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। নতুন প্রস্তাবে সংসদের নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা ৪০০ করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে মহিলাদের জন্য। এই ৪০০ জন সদস্য সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন।

উপরন্তু, সংসদের উচ্চকক্ষেও থাকবে ১০৫টি আসন। এই আসনের সদস্যদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচিত করা হবে। এর মধ্যে ৫ জন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি নিজে মনোনীত করবেন, যাতে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। দুই কক্ষ মিলিয়ে সংসদের মোট আসন সংখ্যা হবে ৫০৫।

বাংলাদেশে

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব

বাংলাদেশের আরও একটি সংবাদপত্র ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, কেউ দুই দফার বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া, ভোটে দাঁড়ানোর সর্বনিম্ন বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ করার কথাও বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার কথাও খসড়া প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নতুন পরিবর্তনের পটভূমি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর দীর্ঘদিন ধরে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এ নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে অন্তত ১৫টি কমিশন গঠন করে, যার মধ্যে অন্যতম সংবিধান সংস্কার কমিশন।

কমিশনটি গত ৩ অক্টোবর গঠন করা হয় এবং তাদের ৯০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। বিএনপি-সহ বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বহু বছর ধরেই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি জানিয়ে আসছিল। এই দাবির ভিত্তিতেই কমিশন তাদের প্রস্তাব তৈরি করেছে।

নারী ও পিছিয়ে পড়া সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত

সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়ানো এবং সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য উচ্চকক্ষের ১০৫টি আসনের মধ্যে ৫টি রাষ্ট্রপতির মনোনীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের মতে, এই পদক্ষেপগুলো আইনসভার পরিসর আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে।

সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্য

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই প্রস্তাবগুলোর মূল লক্ষ্য হলো সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র রোধ করা। যেন ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায়। কমিশন বিশ্বাস করে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণই দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

যদিও সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তবে এগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। কমিশনের প্রস্তাবের ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হবে এবং তারপর তা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে সরকার।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটি একটি বড় পরিবর্তন হতে পারে। দেশের আইনসভাকে আরও কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য এই প্রস্তাবগুলো সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। তবে, প্রস্তাবগুলো কার্যকর করতে হলে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

Read more

Local News