সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো!
মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫ শুরু হতেই প্রয়াগরাজে (পূর্বের ইলাহাবাদ) ভক্ত, সাধু এবং দর্শনার্থীদের ভিড়ে এক অনন্য চরিত্র নজর কাড়লেন। প্রাক্তন নেটপ্রভাবী এবং অধুনা সাধ্বী হর্ষা রিচারিয়া এই মেলার মূল আকর্ষণের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। কেউ বলছেন, তিনি প্রকৃতপক্ষেই জাগতিক মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিকতার পথে পা বাড়িয়েছেন। আবার অনেকের মতে, এই পুরো বিষয়টাই শুধুমাত্র লোকদেখানো।
মহাকুম্ভ মেলার আবহ
১২ বছর অন্তর আয়োজিত মহাকুম্ভ মেলা এ বছর প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি থেকে এবং চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পবিত্র গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমে পুণ্যস্নানের জন্য লক্ষ লক্ষ ভক্ত ইতিমধ্যেই ভিড় জমিয়েছেন। শাহি স্নানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে আরও কয়েক কোটি ভক্ত সমাগম করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এই ভক্তদের ভিড়ে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তিনি হর্ষা রিচারিয়া।
কে এই হর্ষা রিচারিয়া?
উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হর্ষা এক সময় পরিচিত ছিলেন ‘অ্যাঙ্কর হর্ষা’ নামে। সমাজমাধ্যমে তিনি নেটপ্রভাবী হিসাবে পরিচিতি পান। তাঁর ইনস্টাগ্রামে প্রায় ১০ লক্ষ ফলোয়ার এবং হাজারেরও বেশি পোস্ট রয়েছে, যেখানে তিনি নিজের ভ্রমণের ছবি, ভিডিও এবং বিভিন্ন ইভেন্ট সঞ্চালনার মুহূর্ত ভাগ করে নিতেন। ২০২৪ সালে থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ আয়োজন করে তিনি আলোচনায় আসেন।
সন্ন্যাসিনী হওয়ার যাত্রা
২০২৩ সালে হর্ষা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে সন্ন্যাসিনীর জীবন গ্রহণ করেন। আচার্য মহামণ্ডলেশ্বরের কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি ‘সাধ্বী হর্ষা’ নামে পরিচিত হন। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন একজন “সমাজকর্মী এবং হিন্দু সনাতনী সিংহী” হিসেবে। তাঁর দাবি, এই জীবনযাত্রার মাধ্যমে তিনি জাগতিক মোহ ত্যাগ করে অভ্যন্তরীণ শান্তি খুঁজে পেয়েছেন।
মহাকুম্ভে, সাধ্বীর পোশাক, কপালে তিলক এবং মালা পরিহিত অবস্থায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। এক রথে চড়ে তিনি মেলায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে একটি সাক্ষাৎকারে জানান, “আমি যা প্রয়োজন ছিল তা ছেড়ে দিয়েছি। এখন শুধুই ভক্তি এবং ঈশ্বরের আরাধনাই আমার জীবনের লক্ষ্য।” তাঁর বক্তব্যে তিনি জাগতিক মোহ ত্যাগ করে প্রার্থনা এবং আধ্যাত্মিকতার পথে চলার কথা বলেন।
হর্ষার অনুগামী বনাম সমালোচকরা
হর্ষার এই নতুন রূপ দেখে তাঁর অনুরাগীরা মুগ্ধ। তাঁরা বিশ্বাস করেন, তিনি সত্যিকারের আত্মজাগরণের পথ বেছে নিয়েছেন। তবে নেটাগরিকদের একাংশ তাঁর অতীত তুলে ধরে দাবি করছেন, এটি পুরোপুরি লোকদেখানো এবং একটি প্রচারমূলক কৌশল। তাঁদের মতে, আরও জনপ্রিয়তা পেতেই হর্ষা এই “সাধ্বী সাজার নাটক” করছেন।
প্রশংসা ও সমালোচনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া
হর্ষার সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে তাঁকে বাহবা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, একজন সফল নেটপ্রভাবী হয়েও হর্ষা যে আধ্যাত্মিকতার পথে এসেছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু অন্যদিকে, সমালোচকদের মতে, তাঁর অতীত জীবন এবং এখনকার সন্ন্যাসী জীবনযাত্রার মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর নতুন পরিচিতি কেবল সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় থাকার জন্যই।
মহাকুম্ভে হর্ষার প্রভাব
হর্ষার সৌন্দর্য এবং তাঁর আধ্যাত্মিক পথের আকর্ষণ মহাকুম্ভে ভক্তদের আলাদাভাবে আকর্ষণ করেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে তাঁর এই সন্ন্যাসী জীবনের পেছনে আধ্যাত্মিক তাগিদ নাকি প্রচারের উদ্দেশ্য, তা সময়ই বলে দেবে।
উপসংহার
হর্ষা রিচারিয়ার জীবন এবং তাঁর নতুন পথ নিয়ে বিতর্ক যতই থাকুক, এটি নিশ্চিত যে তিনি মানুষের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই যাত্রা হয়তো কিছু মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার কারণ হবে, আবার অন্যদিকে, সমালোচকদের সন্দেহও উস্কে দেবে। হর্ষার ভবিষ্যৎ পদক্ষেপই তাঁর এই নতুন জীবনের সত্যতা প্রমাণ করবে।
রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে পারেন কোহলি-রোহিত, ফর্ম হারানো দুই সিনিয়রকে নির্দেশ দিতে পারে ভারতীয় বোর্ড