Monday, December 1, 2025

স্বামীর সঙ্গে ঘর না করেও স্ত্রী ভরণপোষণের খরচ চাইতে পারেন, জানাল শীর্ষ আদালত

Share

স্বামীর সঙ্গে ঘর না করেও স্ত্রী ভরণপোষণের খরচ!

স্বামীর সঙ্গে সংসার না করলেও স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ পাওয়ার অধিকার থাকতে পারে—সম্প্রতি এক মামলার শুনানিতে এই বিষয়ে রায় দিয়েছেন ভারতের শীর্ষ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট। তবে আদালত এই রায়ও স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য হবে না এবং ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির ওপর তা নির্ভর করবে।

এবার বিষয়টি কেমন ছিল, তা একটু বিস্তারিত জানালে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে। ঝাড়খণ্ডের একটি দম্পতির মধ্যে চলছিল বৈবাহিক কলহের মামলা। ২০১৪ সালের মে মাসে বিয়ের পর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। মাত্র এক বছর পর, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে, স্ত্রী তাঁর বাপের বাড়িতে চলে যান। এর পরেই শুরু হয় তাদের মধ্যে বিবাদ, এবং স্বামী তাঁকে ফের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। কিন্তু স্ত্রী জানান, শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে মানসিক নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছিল।

স্ত্রীর অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে শৌচালয় ব্যবহার করতে দেওয়া হত না এবং রান্নার জন্য স্টোভও ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না। তাঁকে কাঠকয়লা দিয়ে রান্না করতে বাধ্য করা হতো। শুধু তা-ই নয়, স্ত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর ওপর পাঁচ লক্ষ টাকা পণ দাবি করা হচ্ছিল, এবং ওই টাকায় স্বামী একটি গাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন। এসব অত্যাচার সহ্য না করে, স্ত্রীর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, তিনি আর স্বামীর সঙ্গে সংসার করবেন না।

খরচ

এ পরিস্থিতিতে, স্ত্রী ভরণপোষণ চেয়ে নিম্ন আদালতে আবেদন জানান। ওই আদালত তাঁকে মাসে ১০ হাজার টাকা ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়, কিন্তু শর্ত থাকে, তাঁকে স্বামীর সঙ্গে ঘর করার জন্য বলা হয়। এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয়ে, স্বামী ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টে আপিল করেন এবং দাবি করেন যে, স্ত্রী যদি একসঙ্গে সংসার না করেন, তবে তিনি ভরণপোষণের অধিকারী হতে পারেন না। কিন্তু হাই কোর্টের রায়েও স্ত্রীর পক্ষে সাফ কথা বলা হয়, এবং ১০ হাজার টাকা ভরণপোষণ দেবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়।

পরে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। শীর্ষ আদালত মামলার প্রতিটি দিক পর্যালোচনা করে জানান, যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শৌচালয় এবং অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে স্ত্রীর অভিযোগের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। সুপ্রিম কোর্টের মতে, এই ধরনের অবস্থা স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সহায়ক নয়, এবং এর প্রভাব স্ত্রীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার ওপর পড়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, স্ত্রীকে ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট থেকে ভরণপোষণের খরচ হিসেবে মাসে ১০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। এর মানে হল, যে দিন থেকে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন ছিল, সেই দিন থেকে এই অর্থ প্রদান কার্যকর হবে। শীর্ষ আদালত এই রায় দিয়ে জানিয়েছেন যে, ভরণপোষণের অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, এবং সংসার না করলেও তাকে প্রাপ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

এই রায়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে একাধিক জটিলতা এবং সমাজের বিভিন্ন ভিন্নতা উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। আদালত যে পথে হেঁটে নারীর অধিকার এবং সম্মানকে গুরুত্ব দিয়েছে, তা আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

পৌষে এ বার সাধারণ চালের পিঠে নয়, বানিয়ে ফেলুন মুগ সামলি! রইল রেসিপি

Read more

Local News