তুরস্কের ‘কান’ ধরে টানাটানি!
পাকিস্তানের অর্থনীতি দেউলিয়ার প্রান্তে। সরকারি কোষাগার প্রায় খালি, কিন্তু তাতেও অস্ত্র কেনার দৌড় থেমে নেই। এবার পাকিস্তানের লক্ষ্য তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান ‘কান’। সাম্প্রতিক আলোচনায় ইসলামাবাদ তুরস্কের কাছ থেকে এই যুদ্ধবিমান আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তুরস্কের যুদ্ধবিমান কেনার প্রচেষ্টা
সম্প্রতি প্রতিরক্ষা ও শিল্প ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে তুরস্কের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার। সেখানেই তুরস্কের তৈরি ‘কান’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
‘কান’ নির্মাণ করেছে তুরস্কের টার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই)। এটি একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যা প্রথম আকাশে ওড়ে ২০২৪ সালে। তুরস্কের বায়ুসেনা ২০৩০ সালের মধ্যে এই বিমান পুরোপুরি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আমেরিকার এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের অনুকরণে তৈরি, যা তুরস্ক আরও উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি ও আগ্রহ
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু যুদ্ধবিমান নয়, তুরস্কের সহায়তায় অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে পাকিস্তানের। এ লক্ষ্যে দুই দেশের অন্তত ৩২টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একত্রে বৈঠকে অংশ নেন।
২০২৩ সালের জুলাই মাসেই গুজব উঠেছিল যে পাকিস্তান ‘কান’ আমদানির চুক্তি সম্পন্ন করতে চলেছে। তবে দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যে ইসলামাবাদ চীনের কাছ থেকেও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে।
পাকিস্তানের দ্বৈত পরিকল্পনা
পাকিস্তানের বিমানবাহিনী ইতোমধ্যে চীনের কাছ থেকে ৪০টি ‘জে-৩৫’ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া ‘জে-৩১’ যুদ্ধবিমান আমদানির পরিকল্পনাও রয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব বিমান ইসলামাবাদের হাতে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। একই সময়ে পাকিস্তান তুরস্কের ‘কান’ যুদ্ধবিমানের ব্যাপারেও উৎসাহী। অর্থাৎ পাকিস্তান একসঙ্গে দু’ধরনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।
ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’ কিংবা আমেরিকার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ কেনার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। তবে এই চুক্তির সঙ্গে দেশীয় উৎপাদনের শর্তও জুড়ে দেওয়া হতে পারে।
এর পাশাপাশি ভারত সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট’ (অ্যামকা) তৈরির কাজ শুরু করেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্যকর হতে পারে। অ্যামকা প্রকল্পটি পাকিস্তানের ‘আজম’ প্রকল্পের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
পাকিস্তানের আর্থিক সংকট বনাম সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে ভয়াবহ। দেউলিয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও সামরিক খাতে বিশাল ব্যয় করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি যুদ্ধবিমান প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে, তুরস্কও ‘কান’ যুদ্ধবিমান বিক্রির আগে তাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে ১০ বার ভাববে।
তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিমান উৎপাদনের জন্য কিছু শিল্প স্থাপন করতে আগ্রহী। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে অবসরপ্রাপ্ত পাক বায়ুসেনা অফিসার গ্রুপ ক্যাপ্টেন জনসন চাকো জানিয়েছেন।
উপসংহার
পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান কেনার এই প্রচেষ্টা ভারতের জন্য প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। যদিও পাকিস্তানের আর্থিক সংকট বড় বাধা হতে পারে, তবুও ইসলামাবাদের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যদিকে, ভারতও তাদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। দুই দেশের এই প্রতিযোগিতা আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে।
কোল্ড প্লে গানের অনুষ্ঠানে নোটিস! গায়ক ক্রিস মার্টিনকে আগেই সতর্ক করল গুজরাত প্রশাসন

