কলকাতার শেক্সপিয়রদের বর্তমান প্রজন্মের
বিশ্বজুড়ে এমন কিছু পরিবারের অস্তিত্ব রয়েছে যাদের নামেই তাদের পরিচিতি। শেক্সপিয়র এমন একটি নাম, যা শুনলেই বিশ্বসাহিত্য এবং ইতিহাসের কথা মনে পড়ে। কিন্তু কীভাবে শেক্সপিয়রদের একটি শাখা কলকাতার সঙ্গে যুক্ত, তা জানেন কি? তিন দশক আগেও এই তথ্য ছিল প্রায় অজানা। আজ, সমাজমাধ্যমের হাত ধরে উঠে এসেছে এক বিস্মৃত অধ্যায়, যেখানে ‘কলকাতার শেক্সপিয়র’দের বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
শেক্সপিয়রের বংশধরদের কলকাতায় আগমন
শেক্সপিয়র পরিবারের একটি অংশ ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতে আসে। এই পরিবারের সদস্যরা কোম্পানির প্রশাসনিক, বিচারিক, এবং সামরিক বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। জন শেক্সপিয়র নামে একজন এই শাখার প্রবক্তা। পলাশির যুদ্ধের এক দশক পরে বাংলায় আসেন তিনি এবং ঢাকার কোম্পানি প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত হন। কলকাতায় তাঁর কাজ এবং বসবাস তাঁকে ইতিহাসের অংশ করে তোলে। তবে, তাঁর পরিবারকে নিয়ে বিশেষ কোনও তথ্য এতদিন জানা ছিল না।
সমাজমাধ্যমে নাইজেল শেক্সপিয়রের আবির্ভাব
২০২৪ সালে, লেখক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় তাঁর বই “Harry Hobbs of Kolkata and Other Forgotten Lives”-এর প্রচারকালে নাইজেল শেক্সপিয়র নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। নাইজেল দাবি করেন, তিনি জন শেক্সপিয়রের সরাসরি বংশধর। ভিয়েনায় বসবাসকারী এই ফ্রিল্যান্স লেখক পারিবারিক নথি এবং তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেন তাঁর ঐতিহ্য। সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে এই যোগাযোগ না ঘটলে শেক্সপিয়রের বংশধরদের এই বিস্মৃত ইতিহাস হয়তো কোনও দিনই প্রকাশ্যে আসত না।
কলকাতার শেক্সপিয়রদের ঐতিহ্য
শেক্সপিয়র পরিবারের সদস্যরা সাহিত্য, শিল্প এবং সামরিক ক্ষেত্রের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের পিতামহ রিচার্ড এবং পিতামহী অ্যাবিগেলের পাঁচ সন্তানদের মধ্যে টমাসের বংশধররাই ‘শ্যাডওয়েল শেক্সপিয়র’ নামে পরিচিত। এই শাখার কিছু সদস্য পদবির শেষ অক্ষর “ই” বর্জন করে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলেন। ব্রিটিশ ভারতে তাঁদের ভূমিকা শুধু সাহিত্যে নয়, বরং সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
জন শেক্সপিয়রের ছেলে জন ট্যালবট শেক্সপিয়র ১৮০৩ সালে কলকাতার সেন্ট জন’স চার্চে এমিলি থ্যাকারেকে বিয়ে করেন। থ্যাকারি পরিবারও সাহিত্যিকভাবে প্রভাবশালী। ট্যালবট এবং এমিলির বিয়ে দু’টি পরিবারকে ঐতিহাসিক ভাবে যুক্ত করে। তাঁদের নয় সন্তানের মধ্যে তিন পুত্র ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দেন।
কলকাতার শেক্সপিয়রদের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে কলকাতার শেক্সপিয়র বংশের প্রতিনিধি নাইজেল শেক্সপিয়র কলকাতার ঐতিহ্য এবং পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় আসার এবং পরিবার সম্পর্কে আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর কথায়, এই পারিবারিক ঐতিহ্যের তথ্য তাঁকে সমাজমাধ্যম এবং ই-বাণিজ্যের দৌলতেই জানা সম্ভব হয়েছে।
ঐতিহাসিক সংযোগ এবং সাহিত্যিক অবদান
শেক্সপিয়র পরিবারের সদস্যরা শুধুমাত্র ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের অংশ নন, বরং তাঁরা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কাকা টমাসের বংশধররা দড়ি তৈরির ব্যবসায় জড়িত ছিলেন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজগুলির জন্য দড়ি সরবরাহ করতেন। অলিভিয়া শেক্সপিয়র, যিনি শেক্সপিয়রের পরিবারের আরেক শাখার সদস্য, শিল্পী এবং কবিদের সান্নিধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সালোঁ পরিচালনা করতেন।
উপসংহার
সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে খোঁজ পাওয়া এই তথ্য আমাদের শিখিয়েছে যে ইতিহাস শুধু নথি আর পুরাকীর্তিতে বন্দি থাকে না। প্রযুক্তি এবং যোগাযোগের মাধ্যমে ইতিহাসের বিস্মৃত অধ্যায়ও উঠে আসতে পারে। ‘কলকাতার শেক্সপিয়র’রা তাঁদের ঐতিহ্য নিয়ে যতই দূরে থাকুন না কেন, কলকাতার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক চিরকাল অটুট থাকবে।
প্রিয়ঙ্কার সময় ব্যবস্থাপনার রহস্য: মায়ের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

