কানাডার রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল-এর প্রতিবেদন অনুসারে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শীঘ্রই লিবারাল পার্টির নেতা পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করতে পারেন। এমনকি, আগামী বুধবারের মধ্যে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে পারেন বলে সূত্রের খবর। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
দল ও সরকারের ভিতরে চাপ
কানাডার অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রবল চাপে রয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। ২০১৩ সালে লিবারাল পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দীর্ঘ ৯ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন। তবে এই সময়কালে তাঁর জনপ্রিয়তা চরম তলানিতে পৌঁছেছে। একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতির কারণে তিনি নিজের দলের মধ্যেই আস্থা হারিয়েছেন।
সম্প্রতি কানাডার উপমুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ আরও তীব্র হয়েছে। অন্টারিও প্রদেশের ৭৫ জন এমপির মধ্যে ৫১ জনই ট্রুডোকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। দলের বেশ কিছু প্রভাবশালী এমপিও সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

জনপ্রিয়তায় পতন এবং আসন্ন নির্বাচনী সম্ভাবনা
২০২৩ সালের বিভিন্ন নির্বাচনী সমীক্ষা অনুযায়ী, ট্রুডো এবং তাঁর দল লিবারাল পার্টি আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয়ের মুখোমুখি হতে পারে। সমীক্ষাগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায় আসতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রুডোর পদত্যাগ একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ট্রুডোর নেতৃত্বে অসন্তোষ
দেশের ভেতরে ট্রুডোর নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের অবনতি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক নীতি তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কানাডার প্রতিবেশী দেশ আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ক্ষমতায় আসার পথে। আগামী ২০ জানুয়ারি তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, এমন একটি সরকার চায় কানাডা।
দলীয় নেতৃত্বের পরিবর্তনের সম্ভাবনা
ট্রুডো যদি লিবারাল পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, তবে দলের নতুন নেতা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই ট্রুডোর উত্তরসূরি হিসেবে সম্ভাব্য নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে তাঁর পদত্যাগের পর দেশব্যাপী নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবি জোরালো হতে পারে।
ট্রুডোর ভবিষ্যৎ এবং কানাডার রাজনৈতিক চিত্র
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ট্রুডো সরে দাঁড়াবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যদি তিনি এই পদেও থেকে যান, তাহলেও দল এবং সরকারের উপর থেকে তাঁর নিয়ন্ত্রণ যে কমে গিয়েছে, তা স্পষ্ট। লিবারাল পার্টির অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া অসন্তোষ এবং আসন্ন নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের সম্ভাবনা তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
উপসংহার
কানাডার রাজনীতিতে ট্রুডোর ভূমিকা দীর্ঘদিন স্মরণীয় থাকবে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাঁর জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিবারাল পার্টি ও সরকারকে একত্রিত রাখতে এবং আসন্ন নির্বাচনে দলকে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর সিদ্ধান্ত কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
চিনের পর হংকংয়ে হানা দিল এইচএমপিভি! আতঙ্ক না ছড়িয়ে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ কেরলের

