কী এই এইচএমপিভি?
চিনে এক নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, যার নাম হচ্ছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। শুক্রবার থেকে চিনের বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের ভিড় ও একাধিক ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারী সৃষ্টি করতে পারে। তবে চিন সরকার জানিয়েছে যে, এই ভাইরাসের জন্য অতিরিক্ত উদ্বেগের কিছু নেই, এবং এটি শীতকালীন সংক্রমণের একটি অংশ।
চিনের সরকারি বিবৃতি: চিন্তার কিছু নেই
চিনের বিদেশ মন্ত্রক এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এইচএমপিভি সংক্রান্ত গুঞ্জনকে অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শীতকালে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে এবং এটি সাধারণত মরসুমী ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, শীতকালীন সংক্রমণ বাড়লেও এতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, “চিনে বিদেশিদের জন্য পরিবেশ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সরকার তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে যত্নশীল।”
চিনের বিদেশ মন্ত্রক এমনকি ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছিল, রোগীরা এইচএমপিভি-তে আক্রান্ত। কিন্তু চিন সরকারের পক্ষ থেকে এসবকে ‘শীতকালীন সংক্রমণ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এবং তারা নিশ্চিত করেছে যে, সংক্রমণের হার গত বছরের তুলনায় কম।
এইচএমপিভি এবং এর উপসর্গ
এটি নতুন ভাইরাস নয়। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ২০০১ সালে, এবং সারা বিশ্বে এটি শীতকালে সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের প্যাথোজেন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রধান উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি এবং কাশি। বেশিরভাগ রোগী সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাতেই ভুগে থাকেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে। তবে, এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুহার খুবই কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই এবং এর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো টিকাও তৈরি হয়নি। তবে, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন এবং কর্টিকোস্টেরয়েড দেওয়া হতে পারে।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া: ভারত এবং অন্যান্য দেশ
ভারতের স্বাস্থ্য দফতরও এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেসের (ডিজিএইচএস) কর্মকর্তা অতুল গয়াল বলেছেন, “বর্তমানে এই ভাইরাসের জন্য আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।” ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ভাইরাসটি কোভিড-১৯ এর মতো ছড়াবে না, এবং এর সংক্রমণও সীমিত থাকবে।
ভারতের হাসপাতালগুলো এই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত এবং এইচএমপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এটি কিভাবে ছড়ায় এবং প্রতিরোধের উপায়
এই ভাইরাসের সংক্রমণ মূলত শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়, এবং সাধারণ শীতকালীন সংক্রমণের মতো এটি মানুষের মধ্যে অল্প সময়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান এবং হাত ধোয়া এর প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, সংক্রমণের প্রকোপ এড়াতে জনবহুল স্থানে মাস্ক পরা উচিত এবং জীবাণুমুক্তকরণে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
উপসংহার
এইচএমপিভি ভাইরাস নতুন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর প্রভাব ফেলে না। চিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা দুই দেশেই এটিকে অতি উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন না। যদিও বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োগুলির কারণে কিছু উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তবুও বর্তমানে এটিকে শীতকালীন সাধারণ ভাইরাস হিসেবেই দেখা হচ্ছে। জনসাধারণকে শান্ত থাকতে এবং সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে।