আমেরিকার মডেল পরিচয়ে ৭০০ মহিলার সঙ্গে ‘ডেটিং’!
দিনের বেলা এক প্রযুক্তিকর্মী এবং রাতের বেলা ‘আমেরিকার মডেল’। এমনই এক অবিশ্বাস্য দ্বৈত জীবনযাপন করতেন তুষার বিস্ত, দিল্লির এক যুবক, যিনি অনলাইন ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৭০০ মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তাঁদের ঘনিষ্ঠ ছবি এবং ভিডিও ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করতেন। শুক্রবার দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তুষারের পরিচয় ছিল আকর্ষণীয়, কারণ তিনি নিজেকে ‘আমেরিকার মডেল’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণী এবং মহিলারা। তুষারের লক্ষ্য ছিল তাদের বিশ্বাস অর্জন করা, তারপর ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও আদানপ্রদান করা, আর তারপরই শুরু হতো তার ব্ল্যাকমেলিং পর্ব। তদন্তকারীরা জানান, তিনি বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপে নিজের ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে মহিলাদের আকৃষ্ট করতেন।
পুলিশ জানায়, তুষার দিল্লির বাসিন্দা এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি নয়ডার একটি বেসরকারি সংস্থায় ‘টেকনিক্যাল রিক্রুটার’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ভালো বেতন পেতেন। কিন্তু তার আকর্ষণ ছিল নারীদের প্রতি, এবং একই সঙ্গে আরও টাকা উপার্জনের তাগিদে সাইবার অপরাধের দিকে চলে যান তিনি।
তুষার বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ যেমন ‘বাম্বল’, ‘স্ন্যাপচ্যাট’, ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি নিজের প্রোফাইলে আমেরিকার একজন মডেল হিসেবে পরিচিতি দিতেন এবং ব্রাজিলের এক মডেলের ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করতেন। এর মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে আলাপ জমাতেন এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করতেন। একবার বিশ্বাস অর্জিত হলে, মহিলারা তাকে ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও পাঠিয়ে দিতেন। এরপরই তুষার সেই ছবিগুলো ব্ল্যাকমেল করার কাজে ব্যবহার করতেন, এবং টাকা আদায় করতেন।
তদন্তে জানা গেছে, তুষার ৫০০ মহিলার সঙ্গে ‘বাম্বল’-এর মাধ্যমে এবং ২০০ মহিলার সঙ্গে ‘স্ন্যাপচ্যাট’ এবং ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তুষারের ফাঁদে পড়েন। ছাত্রীটি তুষারের সঙ্গে আলাপ করার পর তার বিশ্বাস অর্জিত হয় এবং ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও পাঠাতে শুরু করেন। এরপর তুষার তাকে হুমকি দিতে শুরু করেন, যদি তিনি তার সঙ্গে দেখা না করেন, তবে সেই ছবিগুলো সমাজমাধ্যমে ফাঁস করে দেবেন। তারপরে ছাত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকেন তুষার। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে ছাত্রীটি অবশেষে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায় এবং পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তকারী দল শকরপুর, পূর্ব দিল্লির এলাকায় তুষারের অবস্থান শনাক্ত করে। সেখানে গিয়ে তার কাছ থেকে ১৩টি ক্রেডিট কার্ড এবং হাজারো মহিলার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, তুষারের বাবা একজন গাড়িচালক এবং মা গৃহিণী। তুষারের বোন গুরুগ্রামে একটি সংস্থায় কাজ করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ আরও জানিয়েছে, তুষারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজারো মহিলার জীবনকে বিপদে ফেলেছিল, এবং তিনি তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে টাকা উপার্জনের জন্য ভয়াবহভাবে ব্ল্যাকমেল করছিলেন।
এটি সাইবার অপরাধের একটি জঘন্য উদাহরণ, যেখানে প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার করা হয়েছে। তুষারের গ্রেফতারির পর পুলিশের দাবি, তিনি আরও অনেক মহিলাকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।
প্রাতরাশে মুচমুচে স্বাদ! ডিম ও ভাতের মিশ্রণে তৈরি করুন খাস্তা ওমলেট

