ভোটের দিল্লিতে কেজরী এবং তাঁর দলকে নিশানা মোদীর!
দিল্লির বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে। শুক্রবার দিল্লির অশোক বিহারের রামলালা ময়দানে বিজেপির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আম আদমি পার্টি (আপ)-কে নিশানা করে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি বলেন, ‘‘আপ নামের এই আপদ গত দশ বছর ধরে দিল্লিকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।’’ আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তাঁর দলও দ্রুত মোদীর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে পাল্টা জবাব দেন।
মোদীর কটাক্ষ: ‘আপ’ নয়, ‘আপদ’
জনসভায় কেজরীর নাম উল্লেখ না করেই মোদী বলেন, ‘‘অন্না হজারের আন্দোলনকে সামনে রেখে কিছু কট্টর বেইমান ক্ষমতায় এসেছিল। তারাই এই আপদের সৃষ্টিকর্তা।’’ তিনি অভিযোগ করেন, আপ সরকার দিল্লির উন্নয়নের বদলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। এছাড়াও, মোদী কেজরীর সরকারি বাসভবনের সংস্কার নিয়ে তোপ দাগেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ৪ কোটি গৃহহীন মানুষকে বাড়ি দিয়েছি। চাইলে নিজের জন্য শিশমহল বানাতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি।’’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে কেজরীর বাসভবনের সংস্কারে ৪৫ কোটি টাকা খরচের অভিযোগ ওঠে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয়কুমার সাক্সেনা এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদী কেজরীর ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

আপের দ্রুত প্রত্যাঘাত
মোদীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আপ নেতারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দলের নেতা এবং দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘‘একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন মন্তব্য পদের গরিমার সঙ্গে মানানসই নয়। গত দশ বছরে দিল্লির উন্নয়নে আমরা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছি। জল সরবরাহ, নিকাশি এবং বিদ্যুৎ বণ্টনে আমরা অনেক এগিয়েছি।’’
সৌরভ আরও অভিযোগ করেন, ‘‘দিল্লি পুলিশের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। অপরাধ বাড়ছে, আর তার দায় সরকার এড়িয়ে যাচ্ছে।’’
কেজরীর সংযমিত উত্তর
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আক্রমণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কেজরী বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব দিতে চাই না।’’ তবে মোদীর ‘আপ-দ’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র যদি সত্যিই দিল্লির উন্নয়নে কোনও ভূমিকা নিত, তবে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর ৪৩ মিনিটের বক্তৃতার ৩৯ মিনিট আমাদের সমালোচনা করে কাটাতে হত না।’’
কেজরী দাবি করেন, ‘‘দিল্লির জনগণ আপের কাজকে সমর্থন করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবহন খাতে আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছি। বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্য হল এই উন্নয়নের ধারা থামিয়ে দেওয়া।’’
রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু দিল্লি
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। বিজেপি এবং আপ একে অপরকে চাপে রাখতে মরিয়া। মোদীর ‘আপ-দ’ মন্তব্য এবং কেজরীর পাল্টা প্রতিক্রিয়া দুই পক্ষের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার উদাহরণ।
মোদী এবং বিজেপি নেতৃত্ব যেখানে আপ সরকারকে ‘বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করছেন, সেখানে আপ সরকার তাদের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরছেন। কেজরীর বাসভবনের সংস্কার থেকে শুরু করে দিল্লির আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি মোদী তাঁর বক্তব্যে তুলে এনেছেন। অন্যদিকে, আপ নেতারা বিজেপি সরকারের কর্মকাণ্ডকে তীব্র সমালোচনা করছেন।
দিল্লির ভবিষ্যৎ ভোটারদের হাতে
এখন প্রশ্ন হল, দিল্লির জনগণ এই তীব্র রাজনৈতিক লড়াই থেকে কী সিদ্ধান্ত নেবেন? গত দশ বছরে আপ সরকার জনগণের সমর্থন পেলেও, বিজেপি তাদের দুর্বলতাগুলি তুলে ধরে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। দিল্লির ভোটের ফলাফল শুধু রাজ্য রাজনীতির নয়, কেন্দ্রের রাজনীতির দিকনির্দেশও নির্ধারণ করতে পারে।
এই মুহূর্তে দিল্লির রাজনীতি আপ এবং বিজেপির মধ্যে এক অভূতপূর্ব লড়াইয়ের সাক্ষী। ভোটের ফলাফলই শেষ পর্যন্ত বলে দেবে, ‘আপ’ সত্যিই আপদ কি না, নাকি বিজেপির অভিযোগ জনগণ নস্যাৎ করবে।

