Thursday, January 30, 2025

কৃত্রিম মেধা: পুরাণের ‘অমৃত’ নাকি বৈজ্ঞানিক উন্নতির অপব্যাখ্যা?

Share

কৃত্রিম মেধা

২০২৫ সালকে “কৃত্রিম মেধার বছর” ঘোষণা করেছে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই)। এই ঘোষণাটি দেশের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কর্তৃপক্ষকে নববর্ষ উপলক্ষে পাঠানো একটি বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু এই ঘোষণার পর থেকেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে। এর সঙ্গে যে কুম্ভমেলার তুলনা করা হয়েছে, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

এআইসিটিই-এর বার্তায় বলা হয়েছে, কৃত্রিম মেধা কুম্ভমেলার মতো। যেমন কুম্ভমেলা নদী, মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার মিলনস্থল, তেমনই কৃত্রিম মেধা হলো ডেটা, অ্যালগরিদম ও কম্পিউটেশনাল পাওয়ারের সংমিশ্রণ। এই বিশ্লেষণে, ডেটাকে গঙ্গা, অ্যালগরিদমকে যমুনা এবং কম্পিউটেশনাল পাওয়ারকে সরস্বতীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এমনকি, পুরাণের অমৃতের সঙ্গে কৃত্রিম মেধার তুলনা করতেও পিছপা হয়নি তারা, যেখানে বলা হয়েছে, “অধুনিক যুগে কৃত্রিম মেধাই অমৃতের ভূমিকা পালন করছে”।

তবে এই বার্তা ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষত, বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেকেই এই তুলনাকে ভুল এবং অযৌক্তিক বলে মনে করছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক সনাতন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘পৃথিবীর আধুনিকতম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে পুরাণ আর ধর্মীয় ভাবাবেগের ফোড়নে মিশিয়ে কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানোর এই অপকৌশল অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উদ্বেগজনক।’’ তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক চিন্তা ধারা নিয়ে ভুল ধারণা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে আরও গভীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রাচীন ধারণার মিশেল ঘটাতে চাইলে তা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে, এবং সেটা এই চিঠির মধ্যে স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, এই বার্তা যারা দিয়েছেন, তাঁদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ডেটা সায়েন্স নিয়ে মৌলিক ধারণা নেই বলেই মনে হচ্ছে। ‘‘ডেটা, অ্যালগরিদম এবং কম্পিউটেশনাল পাওয়ারের তুলনা নদীর প্রবাহের সঙ্গে করা সম্পূর্ণ ভুল, কারণ এতে কম্পিউটার সায়েন্সের মূল ধারণারই অবমাননা হচ্ছে,’’ তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া, সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করও এই বার্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কৃত্রিম মেধা একটি বৈজ্ঞানিক এবং কারিগরি উন্নতি, যার ব্যবহার আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এর কোনো সম্পর্ক কুম্ভমেলা বা হিন্দু ধর্মের সঙ্গে নেই।’’ তাঁর মতে, বিজ্ঞান এবং ধর্মকে একত্রিত করার এই প্রচেষ্টা সমাজে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

তবে, কিছু পক্ষ মনে করেন যে কৃত্রিম মেধার এই নতুন পরিচিতি হয়তো সমাজে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করবে। তারা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণাগুলি জনসাধারণের মধ্যে প্রাধান্য পেতে গেলে, তাকে আরো সহজ এবং পরিচিত করে তোলার প্রয়োজন হতে পারে। তাদের মতে, কুম্ভমেলার মতো বড় এবং ঐতিহ্যবাহী ধারণার সঙ্গে তুলনা করাটা হয়তো কৃত্রিম মেধার গুরুত্ব এবং বিস্তৃতি বোঝাতে সাহায্য করতে পারে।

তবে, এই ধরনের তুলনা এবং সমীকরণের জন্য যথার্থতা এবং বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম মেধা এবং আধুনিক প্রযুক্তি থেকে আমাদের একাধিক নতুন ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এইসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক এবং আলোচনা চলতেই থাকবে। তবে, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে এই ধরনের মিশ্রণ কেবলমাত্র বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, এবং সমাজের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

প্রেমিকাকে ফিরে পেতে বাগ্‌দানের আগে ‘বিশেষ কাজ’ করেছিলেন, এবার বিয়ে করলেন বলিউডি গায়ক

Read more

Local News