Thursday, January 30, 2025

মালদহের তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের খুনে গ্রেফতার আরও পাঁচ জন, হাসপাতালে থেকে দেহ পৌঁছল বাড়িতে

Share

মালদহের তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের খুনে গ্রেফতার আরও পাঁচ জন

মালদহের তৃণমূল সহ-সভাপতি দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। ইংরেজবাজার পুরসভার পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে একজন স্থানীয় এবং বাকিরা বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট গ্রেফতারির সংখ্যা দাঁড়াল সাত।

মালদহের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি

গত বৃহস্পতিবার সকালে ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ার কাছে নিজের প্লাইউড কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুলাল সরকার। অভিযোগ, বাইকে করে এসে তিন জন দুষ্কৃতী তাঁর দিকে গুলি চালায়। একটি গুলি তাঁর মাথার কাছে লাগে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলেও, চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন।

দুলাল সরকারের হত্যাকাণ্ড তৃণমূল শিবিরে শোকের ছায়া ফেলেছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও এই ঘটনায় মর্মাহত।

মালদহের

পুলিশি তদন্ত এবং গ্রেফতারি

এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মহম্মদ সামি আখতার বিহারের কাটিহারের বাসিন্দা এবং টিঙ্কু ঘোষ ইংরেজবাজারের গাবগাছি এলাকার বাসিন্দা। শুক্রবার নতুন করে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে এক জন স্থানীয় এবং বাকিরা বাইরের। তদন্তে জানা গিয়েছে, দুলালকে হত্যা করতে ভাড়াটে খুনিদের নিয়োগ করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য ১০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান, “এ পর্যন্ত পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। মোট ছ’জন এই ঘটনায় জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে একজন এখনও পলাতক। পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া এবং নির্দেশ

দুলাল সরকারের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “দুলাল আমার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি তৃণমূল দলের গোড়ার দিন থেকে কাজ করেছেন। কাউন্সিলর হিসেবেও তিনি নিজের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যু আমাকে গভীর দুঃখিত এবং হতবাক করেছে।”

মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি পুলিশের গাফিলতির দিকেও আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, “দুলালের উপর এর আগে আক্রমণ হয়েছিল। তখন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। এটা স্পষ্ট যে পুলিশের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।”

দুলালের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সাবিনা ইয়াসমিনকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তাঁদের উপস্থিতিতে তদন্তের গতি বাড়ানো হয় এবং দ্রুত গ্রেফতারি নিশ্চিত হয়।

শেষযাত্রা এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি

শুক্রবার সকালে দুলালের মরদেহ মালদহের মহানন্দাপল্লীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এবং জেলা তৃণমূলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ইংরেজবাজারে তৃণমূলের পার্টি অফিসে। সেখানে দলের কর্মী-সমর্থকরা দুলালকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

শুক্রবার দুপুরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। দুলালের পরিবার এবং সমর্থকদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

উপসংহার

তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের হত্যা একটি নৃশংস ঘটনা, যা মালদহের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই হত্যাকাণ্ড প্রশাসনের ওপর এক বড় প্রশ্নচিহ্ন টেনেছে। তবে পুলিশ দ্রুত তদন্তে নেমে দোষীদের গ্রেফতার করছে, যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে পরিবার এবং সমর্থকদের। এই হত্যাকাণ্ড তৃণমূল শিবিরে শোকের পাশাপাশি নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

সমুদ্রের ঘোলা জলে ডোবার ভয়ে জুজু! তাইওয়ান নিয়ে গর্জন করেও সংকটে শি জিনপিং

Read more

Local News