অরুণ রায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন দেব-রুক্মিণী
চোখমুখ লাল, ফুঁপিয়ে কাঁদছেন অভিনেতা দেব। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রুক্মিণী মৈত্র। তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম প্রতিভাবান পরিচালক অরুণ রায়কে বিদায় জানাতে এভাবেই ভেঙে পড়লেন তাঁরা। অরুণ রায়ের অকাল প্রয়াণ যেন মেনে নিতে পারছেন না কেউই। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তাঁর চলে যাওয়া বাংলা বিনোদন জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
অরুণ রায়ের সৃষ্টিশীলতা এবং চলচ্চিত্রে অবদান
অরুণ রায় ছিলেন এক ভিন্নধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর ‘হীরালাল সেন’ এবং ‘৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ’ ছবিগুলি বাঙালি দর্শকদের কাছে ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছিল। তাঁর পরিচালিত ‘চোলাই’ ছবিটি সমাজের বিভিন্ন জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে তৈরি। এই ছবির মাধ্যমে তিনি তৎকালীন সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর সিনেমা সবসময়ই ভাবনায় এবং নির্মাণে অন্যধারার ছিল।
দেবের সঙ্গে অরুণের হৃদ্যতা
অরুণ রায়ের সঙ্গে দেবের সম্পর্ক ছিল গভীর এবং আন্তরিক। তাঁদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ‘বাঘা যতীন’ ছবির সময়। এই ছবিতে দেব প্রথমবার বিপ্লবীর চরিত্রে অভিনয় করেন। অরুণের প্রস্তাব শুনে দেব এক কথায় রাজি হয়ে যান। চরিত্রের গভীরে পৌঁছতে পরিচালক যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন, দেব তা মেনে প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন। ছবির জন্য প্রয়োজনীয় খরচে কোনও কার্পণ্য করেননি। এই ছবির শুটিংয়ের সময় থেকেই তাঁদের মধ্যে পেশাদার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।
রুক্মিণীর সঙ্গে সম্পর্ক
অরুণের সঙ্গে রুক্মিণীর সম্পর্কও বিশেষ ছিল। যদিও ‘বাঘা যতীন’ ছবিতে রুক্মিণী অভিনয় করেননি, তবু পরিচালকের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা ছিল অসীম। এদিন দেবের পাশাপাশি রুক্মিণীকেও ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
অরুণ রায়কে শেষযাত্রায় দেব-রুক্মিণীর অংশগ্রহণ
টেকনিশিয়ানস স্টুডিয়ো থেকে পরিচালকের মরদেহ শববাহী গাড়িতে করে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। দেব এবং রুক্মিণী সেই গাড়িতেই উপস্থিত ছিলেন। মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা অরুণকে শেষবারের মতো বিদায় জানান। শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন ছবির নায়িকা সৃজা দত্তও। তাঁর চোখেও ছিল অশ্রু।
শ্মশানে অরুণ রায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শবদেহ যখন চিতায় স্থাপন করা হচ্ছিল, তখন দেব এবং রুক্মিণী তাঁকে বিদায় জানান চোখের জলে। ইহজগতের সমস্ত যন্ত্রণা পেছনে ফেলে অরুণ যেন শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পঞ্চভূতে বিলীন হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
টলিউডের শোকের ছায়া
অরুণ রায়ের প্রয়াণ টলিউড জগতে এক গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। তিনি শুধু একজন প্রতিভাবান পরিচালকই নন, ছিলেন এক অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষ। তাঁর সৃজনশীলতা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা অনেক তরুণ পরিচালকের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
উপসংহার
অরুণ রায়ের অকালমৃত্যু বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং নির্মাণধর্মী চিন্তাধারা বাংলা চলচ্চিত্রে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেব-রুক্মিণীর মতো সহকর্মীরা তাঁর প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, তা প্রমাণ করে যে অরুণ কেবল একজন পরিচালক ছিলেন না, ছিলেন একজন প্রিয় মানুষ, যাঁকে সবাই মনে রাখবেন।
নতুন শ্রমবিধি চালু নিয়ে সংঘাতের পথে কেন্দ্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলি

