Monday, December 1, 2025

প্রতারণায় ওয়টস্যাপ পছন্দ, রিপোর্ট কেন্দ্রের

Share

প্রতারণায় পছন্দ ওয়টস্যাপ

দেশের নাগরিকদের মধ্যে অনলাইন প্রতারণা এখন এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতারকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে খেলা করে তাদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ওয়টস্যাপ, টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম অ্যাপ্লিকেশনগুলির মাধ্যমে এই প্রতারণা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ৮৬,২৭৭টি প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ৪৩,৭৯৭টি অভিযোগ হয়েছে ওয়টস্যাপের মাধ্যমে। এই পরিসংখ্যান একদিকে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি এটি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রতারকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন এখন ওয়টস্যাপ।

প্রতারণার নতুন ধরনের ফাঁদ

ওয়টস্যাপ ব্যবহার করে নানা ধরনের ফাঁদ পাতা হয়। এসব ফাঁদে পড়ে মানুষ বড় অংকের টাকা হারাচ্ছে। প্রতারকরা নিজেদের ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগ পরামর্শদাতা বা ঋণ প্রদানকারী হিসেবে পরিচিতি দেয়। তারা নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে, যেমন ভাল শেয়ার বা অতিরিক্ত রোজগারের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র পরিমাণে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করা হয়, কিন্তু পরে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। গোয়েন্দারা একে ‘পিগ বুচারিং স্কিম’ বলে অভিহিত করেছেন।

ওয়টস্যাপ

একটি সাধারণ ধরন হল, প্রতারকরা লিঙ্ক শেয়ার করে এবং দাবি করে যে, লিঙ্কে ক্লিক করলে অর্থ অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। তবে আসলে এই লিঙ্কগুলো ফাঁদ, যেখানে ক্লিক করলে নির্দিষ্ট তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

পরিসংখ্যানের চিত্র

২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ওয়টস্যাপের মাধ্যমে ৪৩,৭৯৭টি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। টেলিগ্রাম ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে প্রতারণা ঘটেছে যথাক্রমে ২২,৬৮০ ও ১৯,৮০০টি। গত বছরও এই সংখ্যা ছিল বিপুল, যার মধ্যে অনেকেই নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খুইয়েছেন। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত যেসব প্রতারণা মানুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে করা হয়, সেগুলির বেশিরভাগই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয় না। এটি একটি বড় সমস্যা, কারণ অনেক ক্ষেত্রে মানুষ লজ্জা বা ভয় পেয়ে পুলিশকে জানায় না।

সরকারের ভূমিকা

প্রতারণার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ওয়টস্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা ঠেকাতে, সন্দেহভাজন ৫৯ হাজার বিদেশী অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। এর ফলে কিছুটা হলেও প্রতারণা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন। বিশেষত, সম্প্রতি রামমন্দির উদ্বোধনের সময়ে ওয়টস্যাপের মাধ্যমে কিছু সন্দেহজনক লিঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল, যেগুলি অনেকের জন্য প্রতারণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একইভাবে ফেসবুকে ঋণ দেওয়ার নামেও একটি বড় প্রতারণা চক্র সক্রিয় রয়েছে, যা থেকে মানুষকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা।

সচেতনতা এবং নিরাপত্তা

প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরি। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যে কোনো সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক না করতে এবং অপরিচিত বা অবিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে আসা কোনও তথ্য শেয়ার না করতে। এছাড়াও, ব্যক্তিগত তথ্য এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য অনলাইনে শেয়ার করার আগে আরও সতর্ক থাকা উচিত। সাইবার পুলিশও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতারণা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তবে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরও আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দেয় যে, ডিজিটাল দুনিয়া যতই দ্রুত বাড়ছে, ততই সাইবার অপরাধের পরিসরও বাড়ছে। ওয়টস্যাপের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে প্রতারকরা আর কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা হারিয়ে ফেলার সুযোগ না পায়।

রুপোলি রাংতায় মোড়া সোনালি রাত! বর্ষবরণের পার্টিতে কেমন সাজে ধরা দিলেন নীতা অম্বানী?

Read more

Local News