Thursday, January 30, 2025

সাত ঘণ্টা ধরে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ কল্যাণীর বৃদ্ধ! কোটি টাকা লুটের তদন্তে সন্দেহ দুবাই ও কলম্বিয়ার যোগের

Share

সাত ঘণ্টা ধরে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’

বাংলায় আবারও ‘ডিজিটাল গ্রেফতার‘ পদ্ধতিতে প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে। নদিয়ার কল্যাণীর এক বৃদ্ধকে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্তে সাইবার অপরাধ শাখা ইতিমধ্যেই ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগের তদন্তে পুলিশ আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা চক্রের সঙ্গে দুই বিদেশি দেশের যোগসূত্রেরও খোঁজ পেয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, কলম্বিয়া এবং দুবাইয়ের সাইবার অপরাধীরা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত।

ডিজিটাল গ্রেফতার: প্রতারণার অভিনব পদ্ধতি

এ ঘটনায় শিকার হলেন কল্যাণী এলাকার এক বৃদ্ধ ব্যক্তি, যিনি বিত্তশালী এবং তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে প্রতারকরা যোগাযোগ করেছিল। এই প্রতারকরা নিজেদের মুম্বাই পুলিশের আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তিকে একটি ভিডিও কলের মাধ্যমে ভয় দেখানো হয়। প্রতারক জানায়, ওই বৃদ্ধের নাম একটি গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে গেছে এবং তাকে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করা হয়েছে। এরপর তাঁকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে এবং চাপ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলা হয়।

ভয়ভীতি ও বিভ্রান্তির কারণে বৃদ্ধটি একাধিকবার প্রতারকের দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেন। সব মিলিয়ে, তিনি প্রায় এক কোটি টাকা হারান। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন যে, তাকে প্রতারণার শিকার করা হয়েছে এবং সেদিনই থানায় অভিযোগ জানান।

পুলিশি তদন্ত: আন্তর্জাতিক সাইবার চক্রের সন্ধান

প্রতারণার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর, রানাঘাট পুলিশ জেলার সাইবার ক্রাইম শাখা তদন্ত শুরু করে। প্রথমে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাত এবং দিল্লিতে অভিযান চালানো হয়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্তের পর, ১৩ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাইবার অপরাধী আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য। তদন্তে কলম্বিয়া এবং দুবাইয়ের সাইবার প্রতারকদের যোগসাজশ উঠে আসে।

পুলিশের মতে, এই চক্রের সদস্যরা শুধু কল্যাণীর বৃদ্ধকে নয়, আরও অনেকের সঙ্গেও একইভাবে প্রতারণা করে থাকতে পারে। ধৃত ১৩ জনের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে, যাতে এই চক্রের আরও সদস্যদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

শিগগিরই আরও অভিযান

প্রতারণার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্তরা বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। গুজরাত থেকে কয়েকজনকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা হয়েছে রাজ্যে। সাইবার ক্রাইম বিভাগের তদন্তকারী দল জানায়, গ্রেফতারকৃতদের জেরা করে পুরো চক্রের পরিকল্পনা ও কৌশল উন্মোচন করা হবে। তাদের কাছে তথ্য মিললে, পুলিশ নিশ্চিতভাবে এই প্রতারণার আরও অনেক শিকারের সন্ধান পাবে।

এছাড়া, এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। পুলিশ বিভাগের মতে, প্রতারণার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, কারণ তারা বিশ্বাস করছে যে, এই কায়দায় আরও অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

পুলিশ প্রশাসনের সতর্কতা

রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার সানি রাজ জানিয়েছেন, কল্যাণী এলাকায় একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, যেন কোনও অনির্দিষ্ট বা সন্দেহজনক ফোনকল বা মেসেজের শিকার না হন। তিনি আরও বলেন, সাইবার অপরাধীরা দিন দিন আরও নবীন ও বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে, এবং তাদের থেকে রক্ষা পেতে প্রযুক্তিগত সাবধানতা অত্যন্ত জরুরি।

এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাইবার প্রতারণা শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিস্তার লাভ করেছে। সাধারণ মানুষকে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া থেকে বাঁচাতে সরকারের পাশাপাশি, প্রতিটি নাগরিককেই সচেতন থাকতে হবে।

Read more

Local News