সুস্থ থাকার জন্য অফিসযাত্রীদের ডায়েট
নতুন বছরে স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সংকল্প নিয়ে অনেকেই আজ থেকে জীবনধারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে যারা পুরো দিন অফিসে কাটান, তাদের জন্য সঠিক ডায়েট মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিনের তাড়া ও চাপের মধ্যে অনেকেই প্রাতরাশ না খেয়ে অফিসে চলে যান, তারপর চা-কফির সঙ্গে ফাস্ট ফুড খেয়ে দিন পার করেন। এই অভ্যাস শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই চলুন, নতুন বছরে অফিসযাত্রীদের জন্য কীভাবে সুস্থ থাকতে হবে, তা জানি।
প্রাতরাশ: দিন শুরু হোক সঠিক খাবারের সঙ্গে
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলেন, প্রাতরাশকে কখনই এড়িয়ে চলা উচিত নয়। সঠিক প্রাতরাশ দিন শুরু করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাতরাশে আটা রুটি, সবজি (কম মশলার), ওটস বা মিলেট খাওয়া যেতে পারে। যারা ভাত খান, তারা ভাতের সঙ্গে সবজি, মাছ বা ডিম রাখতে পারেন। ডালিয়ার খিচুড়ি, কিনোয়া বা সুজিও ভালো বিকল্প। নিরামিষাশীদের জন্য পনির বা ছানা প্রাতরাশে উপযুক্ত খাবার হতে পারে। প্রাতরাশের পর সারা দিন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি মেলে, যা শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
মিড-মর্নিং: শরীরকে সতেজ রাখার জন্য হালকা খাবার
সাধারণভাবে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর খাবার খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তাই প্রাতরাশের পর ১১টা-১১.৩০টার মধ্যে কিছু হালকা খাওয়া উচিত। একটি আপেল বা পেয়ারা নিয়ে অফিসে যাওয়া যেতে পারে। কলাও খাওয়া যেতে পারে, যদি কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে। এছাড়া, নানা রকম বাদাম ও বীজও স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলি শরীরকে সতেজ রাখে এবং দীর্ঘ সময় কাজ করতে সাহায্য করে।
দুপুরের খাবার: শক্তি ও পুষ্টির সমন্বয়
সকালে যারা ভাত খেয়েছেন, তাদের দুপুরে রুটি ও তরকারি খাওয়া উচিত। তবে প্রোটিনের গুরুত্ব এখানে বিশেষভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। টিফিন বাক্সে মাছ, ডিম বা পনির রাখতে পারেন। নিরামিষ খাবার খেলে সয়াবিন বা ছানা একটি ভালো বিকল্প। যারা প্রাতরাশে দানাশস্য বা ওটস খেয়েছেন, তারা দুপুরে অল্প ভাত খেতে পারেন। সবজি, ডাল এবং প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করলে খাবারটি সুষম হবে। স্যালাড ও টক দইও ভাল বিকল্প হতে পারে।
সন্ধ্যাবেলা: সুস্থ টিফিনের পছন্দ
অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তবে সন্ধ্যাবেলা হালকা কিছু খাওয়া উচিত। মুড়ি এবং ছোলা খাওয়া যেতে পারে, যা দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করে। শসা, পেঁয়াজ এবং ছোলা সেদ্ধ মিশিয়ে মুড়ি মেখে খাওয়া খুবই উপকারী। অফিসে থাকলে ভাজাভুজি বা চপ না খেয়ে টিফিন বাক্সে সেদ্ধ ছোলা, মুগ ডাল, বাদাম বা শুকনো মুড়ি রাখতে পারেন।
রাতের খাবার: হালকা ও পুষ্টিকর
রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। অনেকেই রাত ৯টার পরে বাড়ি ফেরেন, কিন্তু তাও রাত ১২টার আগে খাবার খাওয়া উচিত নয়, কারণ এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাতে হালকা খাবার খেতে হবে, যেমন রুটি, ডাল, সবজি বা চিকেন স্ট্যু। রাতের খাবারে কার্বোহাইড্রেট কম রাখতে হবে এবং সবজি বেশি খেতে হবে। অতিরিক্ত স্যালাড খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
যদি অফিসের কাজ রাত পর্যন্ত করতে হয়, তবে কফি, ঠান্ডা পানীয় বা চা খাওয়া পরিহার করুন। বিকল্প হিসেবে ড্রাই ফ্রুটস রাখুন এবং বেশি করে জল পান করুন। এটি শরীরকে সুস্থ রাখবে এবং রাতের কাজ করার জন্য যথেষ্ট শক্তি যোগাবে।
উপসংহার
নতুন বছরে সুস্থ থাকার জন্য অফিসযাত্রীদের ডায়েট মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাতরাশ, মিড-মর্নিং, দুপুরের খাবার, সন্ধ্যাবেলা ও রাতের খাবারে সঠিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করে শরীর ও মনকে সতেজ রাখা সম্ভব। অতিরিক্ত চা-কফি ও জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কর্মক্ষমতা বাড়বে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমবে।

