Monday, December 1, 2025

টেটের ফল প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা: নতুন বছরেও প্রশ্নের মুখে পর্ষদ

Share

টেটের ফল প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা

২০২৩ সালের টেট পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ নিয়ে দোলাচল এখনও কাটেনি। ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে, তবুও ফল প্রকাশের কোনো নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করা হয়নি। পরীক্ষার্থীরা এই অনিশ্চয়তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। অন্য রাজ্যগুলিতে নিয়মিত টেট অনুষ্ঠিত হয় এবং সময়মতো ফল প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গে টেটের ফল প্রকাশে এই দীর্ঘসূত্রিতা নতুন কোনো বিষয় নয়।

আইনি জটিলতায় আটকে ২০২৩ সালের ফল

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, ২০১৭ এবং ২০২২ সালের টেটের প্রশ্নপত্র নিয়ে বেশ কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে, যা ২০২৩ সালের টেটের ফল প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল সম্প্রতি জানান, ‘‘২০২৩ সালের ফল প্রকাশ আদালতের কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে আটকে রয়েছে।’’ ২০২২ সালের টেটের কিছু প্রশ্ন ভুল ছিল, যা নিয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের একাংশ আদালতে মামলা করেছেন। একইভাবে, ২০১৭ সালের প্রশ্নপত্র নিয়েও আইনি সমস্যা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, ‘‘২০১৭ এবং ২০২২ সালের টেটের ভুল প্রশ্ন নিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এই বিষয়টি বিচারাধীন। ২০২২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হলে ২০২৩ সালের ফল প্রকাশ সম্ভব নয়।’’

পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ এবং প্রশ্ন

পর্ষদের এই যুক্তি মানতে নারাজ ২০২২ এবং ২০২৩ সালের টেট পরীক্ষার্থীরা। ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী মোহিত কাটারি বলেন, ‘‘এর আগে ২০১৪ সালের টেটেও প্রশ্ন ভুল নিয়ে মামলা হয়েছিল। তবে সেসময় ৪২,৯৪৯ এবং ১৬,৫০০ জনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৭ সালের টেটেও প্রশ্ন ভুল ছিল। সেখানেও মামলা চলতে থাকলেও নিয়োগ হয়েছে।’’

মোহিতের প্রশ্ন, ‘‘২০২২ সালের প্রশ্ন নিয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মামলা করলেও আমাদের ইন্টারভিউ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন শুরু করা হচ্ছে না?’’ একই দাবি ২০২৩ সালের পরীক্ষার্থীদের। তাঁদের বক্তব্য, পূর্বে আইনি জটিলতা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে এবার কেন টেটের ফল আটকে রাখা হচ্ছে?

পরীক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা

২০২৩ সালের টেট পরীক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ফলাফলের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। অন্য রাজ্যগুলিতে নিয়মিত টেট হয় এবং ফল প্রকাশ ও নিয়োগ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গে সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার শিকার।

মোহিতের অভিযোগ, ‘‘আমরা জেনেছি যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আমাদের জন্য শিক্ষা দফতরের কাছে শূন্যপদের তথ্য চেয়েছে। কিন্তু শিক্ষা দফতর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’’ এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন।

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

২০২৫ সালে পরীক্ষার্থীরা বড় আন্দোলনের পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছেন। তাঁদের দাবি, শিক্ষা দফতরের নিষ্ক্রিয়তা এবং পর্ষদের দীর্ঘসূত্রিতা এই জটিলতার মূল কারণ। ২ জানুয়ারি বিকাশ ভবনে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। পরীক্ষার্থীরা আশা করছেন, তাঁদের আন্দোলনের চাপেই দ্রুত ফল প্রকাশ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সমাধান কোথায়?

টেট পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে এই অনিশ্চয়তা শুধু পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে না, বরং শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত আইনি জটিলতা মেটানো এবং ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু করা, যাতে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কোনো দোলাচল না থাকে।

এই দীর্ঘসূত্রিতা শুধু পরীক্ষার্থীদের হতাশ করছে না, বরং নতুন বছরে তাঁদের রাজপথে নামতে বাধ্য করছে। ২০২৩ সালের টেটের ফল দ্রুত প্রকাশিত না হলে এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হতে পারে।

Read more

Local News