ইলন মাস্ক বনাম বিল গেটস
টেক দুনিয়ায় ফের উত্তেজনা। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রে এলেন ইলন মাস্ক। টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মাস্ক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, গেটস শীঘ্রই দেউলিয়া হতে পারেন। সমাজমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন তিনি।
মাস্কের বক্তব্য এবং গেটসকে আক্রমণ
ইলন মাস্ক লিখেছেন, “যদি টেসলা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থা হয়ে ওঠে, তবে অনেকের কপাল পুড়বে। এমনকি বিল গেটসও দেউলিয়া হয়ে যাবেন।” উল্লেখ্য, ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর গেটস বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি ছিলেন। সেই সময় মাইক্রোসফট প্রযুক্তি জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তবে মাস্কের এমন ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আর্থিক বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন মত পোষণ করছেন।
মাস্কের বক্তব্যের পরই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিল গেটস। জানা গিয়েছে, টেসলার শেয়ার মূল্য বাড়ায় গেটসের ১৫০ কোটি ডলার লোকসান হয়েছে। গেটস ‘শর্ট পজিশনে’ টেসলার শেয়ার কিনেছিলেন, যা শেয়ারের দাম পড়ার পর পুনরায় কেনার মাধ্যমে লাভ করার কৌশল। কিন্তু টেসলার শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে।
বিতর্কের পটভূমি
ইলন মাস্ক এবং বিল গেটসের মধ্যে বহুদিন ধরেই শীতল সম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালে গেটস এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি টেসলার শেয়ারের ‘শর্ট পজিশনে’ বিনিয়োগ করেছেন। বিষয়টি জানার পর থেকেই মাস্ক প্রকাশ্যে গেটসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। সম্প্রতি এক পোস্টে তিনি গেটসকে ‘ভণ্ড’ আখ্যা দেন এবং দাবি করেন, গেটস কেবল টেসলার ক্ষতির অপেক্ষায় রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মাস্কের দাবি মানতে নারাজ আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে:
- মাইক্রোসফটের শক্তিশালী অবস্থান
মাইক্রোসফট একটি বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা, যা সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, এবং ক্লাউড কম্পিউটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে গেটসের সম্পদের বড় অংশ এই সংস্থার সাফল্যের উপর নির্ভরশীল, যা তাকে আর্থিক দেউলিয়াত্ব থেকে অনেক দূরে রাখে। - বাজারের প্রতিযোগিতা
টেসলার বর্তমান শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সত্য হলেও, ভবিষ্যতে এটি টিকে থাকবে কিনা তা বলা কঠিন। অন্য সংস্থাগুলি পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরির দৌড়ে সামিল হলে, টেসলার বিক্রি কমতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাস্কের সংস্থার লোকসানের সম্ভাবনা তৈরি হবে। - গেটসের বহুমুখী বিনিয়োগ
বিল গেটস শুধুমাত্র টেসলার উপর নির্ভরশীল নন। তার বিভিন্ন বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষা খাতে একাধিক প্রকল্প। ফলে একটি সংস্থার ক্ষতির প্রভাব তার মোট সম্পদের উপর তেমনভাবে পড়বে না। - মাইক্রোসফট বিক্রির সম্ভাবনা
যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তবে গেটস প্রয়োজনে মাইক্রোসফটের শেয়ার বিক্রি করেও আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।
রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিতর্কের ভবিষ্যৎ
ইলন মাস্ক সম্প্রতি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে সক্রিয় হয়েছেন। ট্রাম্পের জয় মাস্কের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার মূল্য বাড়িয়েছে। এমনকি মাস্ককে ট্রাম্প তার কিচেন ক্যাবিনেটে সদস্য করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, মাস্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করতে পারে।
উপসংহার
বিল গেটস বনাম ইলন মাস্কের এই বিরোধ দুই প্রযুক্তি দিগ্গজের পারস্পরিক মনোভাবের একটি উদাহরণ। যদিও মাস্কের মন্তব্যে সাময়িক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তবু গেটসের দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে অনেকটাই অবাস্তব। বরং এই প্রতিযোগিতা থেকে দুই সংস্থাই নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে।