Friday, February 7, 2025

দল না ভাবমূর্তি? নায়কোচিত না বিরাটোচিত? বিরাট কোহলির ধাক্কা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন

Share

দল না ভাবমূর্তি?বিরাট কোহলির ধাক্কা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন

বিরাট কোহলি—একদিকে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ের নায়ক, অন্যদিকে মাঠে তাঁর আগ্রাসী মানসিকতার জন্য চর্চার কেন্দ্র। মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দিনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কারণে আবারও সেই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিপক্ষের অভিষেক খেলোয়াড় স্যাম কনস্টাসের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির মুহূর্ত ক্রিকেটমহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, এটি কি দলকে জেতানোর তাগিদ নাকি শুধুই এক আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া?

কনস্টাসের সঙ্গে বিরাটের দ্বন্দ্ব

মেলবোর্ন টেস্টের দশম ওভারে ঘটে যাওয়া একটি ছোট ঘটনা এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। মহম্মদ সিরাজ ওভার শেষ করে দিক পরিবর্তন করছিলেন। তখন উল্টো দিক থেকে আসছিলেন কনস্টাস। সেই মুহূর্তে, বিরাট ইচ্ছাকৃতভাবে দিক পরিবর্তন করে কনস্টাসকে ধাক্কা দেন। রিপ্লে-তে দেখা গেছে, কনস্টাস ব্যাট হাতে মাথা নিচু করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু বিরাট সরাসরি এসে তাঁকে ধাক্কা মারেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিরাটের আচরণ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

প্রাক্তন ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া

বিরাটের এই আচরণ অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারের মনঃপূত হয়নি। ধারাভাষ্যকার মাইকেল ভন বলছেন, “একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের এমন আচরণ শোভন নয়।” রিকি পন্টিং তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বিরাট ইচ্ছাকৃতভাবেই কনস্টাসকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছেন।” সুনীল গাওস্করও বিরাটের এই আচরণকে সমর্থন করেননি। তিনি মনে করেন, “দু’জনকেই শাস্তি দেওয়া উচিত।” অন্যদিকে, রবি শাস্ত্রী বলেন, “বিরাটের মতো খেলোয়াড়ের এমন আচরণ অপ্রয়োজনীয়। তাঁর উচিত ছিল এই সীমা অতিক্রম না করা।”

বিরাটের অতীত আগ্রাসন

বিরাটের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে মাইকেল ক্লার্কদের সঙ্গে তাঁর কথার লড়াই আলোচনার কেন্দ্র হয়েছিল। ২০১২ সালে দর্শকদের উদ্দেশে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন বিরাট। ২০১৪ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে মিচেল জনসনের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও স্মরণীয়। বিরাট তখনই বলেছিলেন, “আমি মাঠে ঝগড়া করতে পিছপা হই না। এসব আমাকে উত্তেজিত করে এবং সেরাটা বের করে আনে।” তাঁর সেই মনোভাব এখনও অটুট।

দল নাকি ভাবমূর্তি—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

বিরাট সব সময় বলেন, তিনি নিজের ইমেজ নিয়ে ভাবেন না। তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল দলকে জেতানো। মেলবোর্ন টেস্টেও হয়তো সেই উদ্দেশ্যেই তিনি কনস্টাসের মনঃসংযোগ নষ্ট করতে চেয়েছিলেন। কনস্টাস তখন দ্রুত রান তুলছিলেন। যশপ্রীত বুমরাকে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতীয় বোলারদের উপর চাপ তৈরি করছিলেন। বিরাটের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে অস্থির করা, যাতে তিনি আউট হয়ে যান।

তবে, প্রশ্ন হল, দলকে জেতানোর জন্য নিজের ভাবমূর্তির এভাবে অবনতি করা কি আদৌ সঠিক?

শাস্তি ও ভবিষ্যতের ভাবনা

আইসিসি ইতিমধ্যেই বিরাটকে শাস্তি দিয়েছে। তাঁর ম্যাচ ফি-র ২০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়েছে এবং একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। ২৪ মাসের মধ্যে আরও তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে তাঁকে নির্বাসিত হতে হবে। বিরাট জানেন, তাঁর প্রতি সমর্থকদের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে এমন ভক্তরা, যারা তাঁকে নায়ক মনে করেন।

অভিষেক খেলোয়াড় কনস্টাসের সঙ্গে এই ঘটনা হয়তো তরুণ অস্ট্রেলীয় ব্যাটারের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলবে। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা দু’জনেই হয়তো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এটা ক্রিকেট। মাঠের লড়াই মাঠেই থাকুক।”

নায়কোচিত না বিরাটোচিত?

যখন প্রশ্ন ওঠে বিরাটের আচরণ নিয়ে, তখন এটি পরিষ্কার যে তাঁর এই মানসিকতা নায়কোচিত নয়। তবে এটি নিঃসন্দেহে বিরাটোচিত। বিরাট কোহলি এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি মাঠে দলকে সাফল্য এনে দিতে কোনও কিছুতে পিছপা হন না। কিন্তু তাঁর এই ধরণের আচরণ কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?

রবি শাস্ত্রী হয়তো ঠিকই বলেছেন, “সব কিছুর একটা সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম না করাই ভাল।” বিরাটের পক্ষে হয়তো এই সীমারেখা মানা প্রয়োজন, যাতে তাঁর ভক্তদের চোখে তিনি সব সময় এক ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারেন।

Read more

Local News