Monday, December 1, 2025

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ছে তরুণীদের? নেপথ্যে কি কলকাঠি নাড়ছে টাইপ ২ ডায়াবিটিস?

Share

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ছে তরুণীদের?

একটি সময় ছিল, যখন হার্ট অ্যাটাককে পুরুষদের এবং বয়স্কদের রোগ হিসেবে ধরা হতো। তবে গত কয়েক বছরে এই ধারণা অনেকটাই বদলেছে। বর্তমানে চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাকের শিকার এখন কমবয়সি মহিলারাও হচ্ছেন। বিশেষ করে যাঁরা ৫০ বছরের নিচে, তাঁরা খুব দ্রুত হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিতে পড়ছেন। এর মূল কারণ হিসেবে অনেকেই টাইপ ২ ডায়াবিটিসকে দায়ী করছেন, যা খুব সূক্ষ্মভাবে হার্টের রোগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ডায়াবিটিসের প্রভাব

চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানাচ্ছেন, টাইপ ২ ডায়াবিটিস হৃদ্‌রোগের একটি বড় কারণ। টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হলে শরীরে ‘লাইপোপ্রোটিন ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স’ বেড়ে যায়, যার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়লে, তা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

টাইপ ২ ডায়াবিটিসের কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে এবং শরীরের রক্তনালীগুলোর ক্ষতি হয়, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ ২ ডায়াবিটিস করোনা সংক্রমণ এবং করোনারি ডিজ়িজ়ের ঝুঁকি প্রায় ১০ গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

মহিলাদের হৃদ্‌রোগের উপসর্গ

হৃদ্‌রোগের উপসর্গ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে একটু আলাদা। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের পূর্বে ক্লান্তি, নিঃশ্বাসের সমস্যা, হজমের গোলমাল, ঘুমের সমস্যা, এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। যদি এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের জন্য হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষত যদি তারা ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন, বা খারাপ জীবনযাপনের অভ্যাসে অভ্যস্ত হন।

তরুণীদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি

বর্তমানে তরুণীদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ানোর প্রধান কারণ হলো জীবনযাত্রার স্টাইল। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, কর্মব্যস্ত জীবন, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, এবং অনিয়মিত ব্যায়াম— এসবের কারণে তরুণীরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।

একই সঙ্গে, অত্যধিক স্ন্যাকস বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ, ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার অভ্যাস, এবং ব্যায়ামের অভাবও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দীর্ঘ সময় কাজের চাপের মধ্যে থাকা, যা শারীরিক এবং মানসিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিকর।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরামর্শ

তরুণীদের যদি সুস্থ থাকতে হয়, তবে কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন ধূমপান ত্যাগ করা, সঠিক সময়ে সুষম আহার গ্রহণ করা—কম ফ্যাট, কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।

একই সঙ্গে, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ঠান্ডা পানীয় কম খাওয়া উচিত। টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া, মানসিক চাপ কমানো, এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা অত্যন্ত জরুরি। মেনে চললে তরুণীরাও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারবেন এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন।

Read more

Local News