Monday, December 1, 2025

‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া: ইডি’র অভিযোগ ও তদন্তের অগ্রগতি

Share

লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস

প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এবার ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর অস্থাবর সম্পত্তির ওপর নজর দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইতিমধ্যে সংস্থাটির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইডি আদালতকে জানিয়েছে, ভুয়ো ইনভয়েসের মাধ্যমে এই অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির টাকা জমা পড়ত।

আগের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ও নতুন পদক্ষেপ:

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর আটটি স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইডি। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ছিল ৭ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। এই সম্পত্তিগুলি সরাসরি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছে ইডি। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার অনুমতির জন্য দিল্লির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের ‘অ্যাডজুকেটিং অথরিটি’-র কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

পঞ্চম চার্জশিটের বিশদ বিবরণ:

ইডির পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর একটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ব্যবসায় ভুয়ো ইনভয়েসের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা জমা পড়ত। এই পুরো লেনদেনের প্রক্রিয়া সরাসরি তদারকি করতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, যিনি কালীঘাটের কাকু নামে পরিচিত।

সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রধান ব্যক্তি:

‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সিইও ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে ইডি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছিল। তল্লাশি চালানো হয়েছিল সংস্থার মূল অফিসেও।

আদালতের নির্দেশ ও অভিষেকের জবাব:

কলকাতা হাই কোর্ট ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ডিরেক্টরদের সম্পত্তি, সংস্থার লেনদেন, কর্মীদের তথ্য, এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ দিতে নির্দেশ দেয়। ইডি এই বিষয়ে অভিষেকের কাছে নথি চেয়ে পাঠায়, যা তিনি জমা দেন।

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকা:

‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর আর্থিক কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। পরে তিনি সংস্থার সিওও পদে নিযুক্ত হন এবং ডিরেক্টর পদের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তবে ইডির দাবি, সংস্থার আর্থিক লেনদেন ও দুর্নীতিতে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

অন্যান্য অভিযুক্ত এবং অসঙ্গতি:

ইডির পঞ্চম চার্জশিটে আরও দুই নাম উল্লেখ করা হয়েছে—‘লক্ষ্মী সাইকেল প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং নবীনকুমার গুপ্ত। ইডি দাবি করেছে, এই সংস্থাগুলির আর্থিক লেনদেনে অসঙ্গতি রয়েছে। ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর সঙ্গেও তাদের যোগসূত্র রয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

ইডি’র দাবি ও তদন্তের অগ্রগতি:

ইডির দাবি অনুযায়ী, ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ শুধু স্থাবর সম্পত্তি নয়, অস্থাবর সম্পত্তির মাধ্যমেও দুর্নীতির অর্থ লেনদেন করেছে। এর মধ্যে ভুয়ো ইনভয়েস তৈরি করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া অন্যতম।

পরবর্তী পদক্ষেপ:

ইডি জানিয়েছে, ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া এখনো চলছে। ভবিষ্যতে আরও তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার:

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যগুলো যদি আদালতে প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে।

Read more

Local News