প্রাক্তন স্ত্রীর রোজগেরে হওয়া খোরপোশ ?
বিবাহবিচ্ছেদের পরও প্রাক্তন স্ত্রীর রোজগেরে হওয়া তাঁকে খোরপোশ পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে না। এমনকি স্ত্রীর আর্থিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্মান রক্ষা করতে খোরপোশ দেওয়া জরুরি হলে, তা দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ে এই কথা জানানো হয়েছে। শনিবার এক মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। এর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার করেছে যে, স্ত্রীর আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্মান বজায় রাখতে হলে, বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রাক্তন স্বামীর পক্ষ থেকে খোরপোশ দেওয়া বাধ্যতামূলক হতে পারে, তা সে রোজগেরে হোন বা না হোন।
মামলার প্রেক্ষিত
এই রায়ের পেছনে তামিলনাড়ুর এক মামলার ঘটনা রয়েছে। মামলাকারী স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পেশাদার এবং রোজগেরে। তাঁরা দুজনই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে তারা কখনও চণ্ডীগড়ে, কখনও বেঙ্গালুরুতে বসবাস করেছেন। যদিও তাঁদের আর্থিক অবস্থান বিয়ের সময় বেশ ভালো ছিল, কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। মহিলার জীবনে আর্থিক চাপ আসে এবং মামলা লড়তে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। এমন অবস্থায় তাঁর আর্থিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্মান রক্ষা করতে খোরপোশের প্রয়োজন রয়েছে, বলেই সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ।
প্রথমে মাদ্রাজ হাই কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়েছিল। সেখানে মহিলার পক্ষে খোরপোশের আবেদন জানানো হয়নি, তবে তাঁকে সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি আবেদন করেছিলেন। তবে হাই কোর্ট মামলার ফলাফলে মহিলাকে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি। কারণ, উভয়েই পেশাদারি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং রোজগেরে, তাই বৃহত্তর স্বার্থে খোরপোশের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের রায়
হাই কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মহিলাটি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, “রোজগেরে হওয়া মানেই খোরপোশ পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে না।” আদালত আরো বলেছে, “বিবাহবিচ্ছেদের পর সমাজে সম্মান ও আর্থিক সচ্ছলতা বজায় রাখতে খোরপোশের প্রয়োজন হলে, তা দিতে হবে।” সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করে যে, কোনও মহিলার রোজগেরে হওয়া তাকে খোরপোশ পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না, যদি তার সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার প্রয়োজন থাকে। আদালত এও জানায় যে, খোরপোশের জন্য প্রাক্তন স্বামীকে মহিলার হাতে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোজগেরে স্ত্রীর খোরপোশ প্রাপ্তির অধিকার
এটি প্রমাণিত হল যে, স্ত্রী রোজগেরে হলেও, তার প্রাক্তন স্বামীর পক্ষ থেকে খোরপোশ প্রদান করা বাধ্যতামূলক হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের মতে, “বিবাহবিচ্ছেদের পর সামাজিক সম্মান এবং আর্থিক সচ্ছলতা বজায় রাখতে যে কোনো স্ত্রীর খোরপোশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তার রোজগারের পরিমাণ বা অবস্থান না-হলেও।” এমনকি যদি মহিলার পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে চলার পথ সহজ হয়ও, তবুও বিবাহবিচ্ছেদের পর তার সম্মান এবং সামাজিক অবস্থান বজায় রাখার জন্য এই আর্থিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে খোরপোশ সংক্রান্ত নির্দেশিকা
এই রায়টি কেবলমাত্র খোরপোশের পক্ষে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গঠন করেছে, যা মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে সহায়ক। এটি একটি সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেখানে বিবাহবিচ্ছেদের পরও সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রাক্তন স্ত্রীর অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনার মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলার আর্থিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
উপসংহার
তামিলনাড়ুর মামলার পর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, রোজগেরে স্ত্রীরও খোরপোশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যদি তা তার আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখতে প্রয়োজন হয়। এই রায়টি মহিলাদের জন্য একটি বড় ধরনের আশীর্বাদ হতে পারে, কারণ এটি তাদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে, এবং সমাজে তাদের সম্মান বজায় রাখবে।

