ডোনাল্ডের ‘বং কানেকশন’?
কলকাতার সায়েন্স সিটির কাছে ৩৮ তলার একটি গগনচুম্বী বহুতল নির্মাণ করছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংস্থা ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজ়েশন’। এই বহুতলটি ট্রাম্প টাওয়ার নামে পরিচিত। কলকাতার ব্যস্ত ইএম বাইপাসের ধারে এই বহুতল ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। ট্রাম্পের নামের আকর্ষণে একাধিক ফ্ল্যাট বুকিং হয়ে গিয়েছে, যদিও পুরো কাজ এখনও শেষ হয়নি।
ট্রাম্প টাওয়ারের পেছনের গল্প
স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা ইউনিমার্ক প্রথমে সায়েন্স সিটির কাছেই একটি বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প অর্গানাইজ়েশনের সঙ্গে ইউনিমার্কের চুক্তি হয়। এরপর এই প্রকল্পের নামকরণ হয় ‘ট্রাম্প টাওয়ার’। গগনচুম্বী এই বিল্ডিং দেখতে কলকাতায় এসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
এই প্রকল্প ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের গতি কিছুটা ধীর হওয়ায় এখনও তা শেষ হয়নি। তবে ফ্ল্যাট বুকিংয়ের কাজ চলছে। তিন থেকে পাঁচ কামরার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের দাম ৩ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকার মধ্যে। ট্রাম্পের নাম দেখে ফ্ল্যাট বুকিং করতে আগ্রহী হয়েছেন অনেকেই।
অবস্থান এবং আকর্ষণীয় দিক
‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর অবস্থান অত্যন্ত সুবিধাজনক। সায়েন্স সিটির পাশে অবস্থিত এই বহুতল থেকে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেমন মা উড়ালপুল, বাসন্তী হাইওয়ে এবং সল্টলেক সেক্টর ফাইভ। বিল্ডিংয়ের পাশেই রয়েছে আরেকটি বিলাসবহুল প্রকল্প, ‘অ্যাটমসফিয়ার’। তবে উচ্চতায় এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যে ট্রাম্প টাওয়ার সহজেই অন্য সব বিল্ডিংকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
বহুতলের প্রধান ফটকে কালো দরজায় সোনালি অক্ষরে লেখা ট্রাম্পের নাম দূর থেকেই নজর কাড়ে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি শুধু কলকাতার নয়, ভারতের অন্যতম চমকপ্রদ স্থাপত্য হিসেবে পরিচিতি পাবে।
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
কলকাতার পুনম দত্ত ২০১৮ সালে ট্রাম্প টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বুক করার পর তিনি বলেন, “ট্রাম্পের নাম দেখেই আমরা এর গুণমান নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। এই টাওয়ারে ফ্ল্যাট থাকা আমাদের কাছে সম্মানের।”
একইভাবে, চাকুরিজীবী সুমিত ভালোটিয়া প্রায় ছয় কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুক করেছেন। তাঁর মতে, “ট্রাম্প টাওয়ার শুধু একটি বাড়ি নয়, এটি বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রতীক। এখানে অসাধারণ পরিষেবা পাব বলে আমি নিশ্চিত।”
ট্রাম্পের নামের চৌম্বকীয় টান
ট্রাম্প অর্গানাইজ়েশন এর আগে মুম্বই এবং পুণেতে দুটি ট্রাম্প টাওয়ার তৈরি করেছে। কলকাতার প্রকল্পটি তাদের তৃতীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিলাসবহুল আবাসন তৈরি করছে সংস্থা।
ট্রাম্পের নাম থাকা মানেই বাড়ির দামের ঊর্ধ্বগতি। ক্রেতারা মনে করেন, ট্রাম্প ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অর্থ বাড়তি গুণমান ও আভিজাত্যের নিশ্চয়তা। এই চাহিদার কারণেই ট্রাম্প টাওয়ার কলকাতার রিয়েল এস্টেট বাজারে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কলকাতার এই বহুতল সম্পূর্ণ হওয়ার পর ট্রাম্প অর্গানাইজ়েশন ভারতের আরও কয়েকটি শহরে একই ধরনের প্রকল্প শুরু করার পরিকল্পনা করছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সংস্থার ব্যবসা আরও বিস্তৃত করতে চাচ্ছেন।
‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর নির্মাণ শেষ হতে দেরি হলেও ক্রেতাদের উৎসাহ কমেনি। ট্রাম্পের ব্র্যান্ডের প্রতি ভরসা রেখে তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্প কলকাতার আকাশচুম্বী স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।