ক্রিকেটকে বিদায় অশ্বিনের
ভারতীয় ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল গত ১৮ ডিসেম্বর, যখন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) ঘোষণা করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের। বর্ডার গাওস্কর ট্রফির (Border Gavaskar Trophy) চলতি সিরিজের মাঝেই এই অবসরের খবর ঘোষণা করলেন তিনি। সিরিজের তৃতীয় টেস্টের পর যখন অনেকেই অশ্বিনের ফর্ম এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছিলেন, ঠিক তখনই এক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের অন্যতম সেরা অফস্পিনার।
ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত এই টেস্ট ম্যাচ ড্র হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠকে এসে নিজের অবসরের ঘোষণা করেন ৩৮ বছর বয়সী অশ্বিন। নিজের অবসর ঘোষণা করে তিনি বলেন, “এটাই আমার ক্রিকেট জীবনের শেষ দিন ছিল। আমি আর ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে নামব না। সব ধরনের ফরম্যাট থেকেই অবসর নিচ্ছি।” তাঁর মতে, ক্রিকেট তাঁর জীবনকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং যদিও তিনি আর মাঠে নামবেন না, তবুও ক্রিকেটের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে।
এক দশকের অভিজ্ঞতা, সাফল্যের রেকর্ড
অশ্বিনের অবসর ঘোষণাটি ক্রিকেট বিশ্বে একটি বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে, কারণ তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা স্পিনার হিসেবে বিবেচিত। তার ক্যারিয়ারের সাফল্য এবং পরিসংখ্যানের কথা বললে, এটি কেবল ভারত নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যও গর্বের বিষয়।
অশ্বিন ১০৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এবং এই সময়ে ৫৩৭টি উইকেট নিয়েছেন। তার মধ্যে ৩৭ বার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন এবং ৮ বার ম্যাচে দশ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও রয়েছে। তার এক ইনিংসে সেরা পারফরম্যান্স ছিল ৫৯ রান খরচে ৭ উইকেট, যা তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং স্ট্যাটিস্টিক। শুধু বোলিংই নয়, ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ৬টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অশ্বিন, যা তাকে একটি অলরাউন্ডার হিসেবে তুলে ধরেছে।
অশ্বিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একাধিক বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য থাকার সুযোগ ছিল। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, তার অধিক পরিচিতি পেয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে তার অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্সের জন্য। বিশেষ করে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতীয় দলের হয়ে সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহের কৃতিত্ব তারই।
সীমিত ওভারে কিছুটা দুরে ছিলেন
যদিও অশ্বিন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কিছুটা দূরে ছিলেন, তবে টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ভারতের মূল অংশ ছিলেন। বিশেষ করে, ভারতের স্পিন বোলিং আক্রমণে অশ্বিনের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যদিও তাকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি, তবুও তার টেস্ট পারফরম্যান্সে তিনি এক অনন্য স্থানে পৌঁছেছেন।
সীমিত ওভারে দল থেকে দূরে থাকার পরও, অশ্বিনের জায়গা টেস্ট দলে মজবুত ছিল। তিনি ভারতীয় স্পিন আক্রমণের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিলেন। ২০২৪ সালের শুরুতে বর্ডার গাওস্কর ট্রফির চলতি সিরিজের মাঝেই অবসর নেওয়া তার জন্য এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত হলেও, তার দীর্ঘদিনের ক্রিকেট জীবন এবং সাফল্য তাকে এমন এক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে যেখানে তিনি তার অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ক্রিকেটে ভবিষ্যত পরিকল্পনা
অশ্বিনের অবসর ঘোষণার পর তিনি বলেছিলেন, “ক্রিকেট আমাকে সবকিছু দিয়েছে এবং ক্রিকেটের সঙ্গে আমি সবসময় জড়িত থাকতে চাই।” এই কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে তার অদূর ভবিষ্যতে ক্রিকেটে কাজ করার সম্ভাবনার ইঙ্গিত। হয়তো তিনি কোচিংয়ে, বা অন্যান্য ক্রিকেট সম্পর্কিত কাজের মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।
শেষ কথা
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তাঁর বোলিং দক্ষতা এবং ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের একটা বিশাল জায়গা তৈরি করেছেন। এই অবসর কেবল তার ক্যারিয়ারের শেষ নয়, বরং এক যুগের ক্রিকেট ইতিহাসেরও শেষ অধ্যায়। তবে, যেহেতু ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা অপরিসীম, তাই হয়তো ভবিষ্যতে কোনো নতুন ভূমিকায় তাকে আবার দেখা যাবে।