মোহাম্মদ আমির
পাকিস্তানের তারকা বাম হাতি পেসার মোহাম্মদ আমির আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন। ২০২০ সালে প্রথম অবসর নেওয়ার পর ২০২৪ সালের মার্চে জাতীয় দলের জন্য ফের মাঠে ফিরে আসেন, তবে মাত্র কয়েক মাস পর আবারও তার অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলেন। গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি এই ঘোষণা দেন, যা তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের এক নাটকীয় মোড়ে পৌঁছাল।
মোহাম্মদ আমিরের দ্বিতীয় অবসর
মোহাম্মদ আমির ২০২০ সালে প্রথমবার অবসর নেন, তবে ২০২৪ সালে তিনি আবারও পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জার্সি পরেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মাঠে ফিরে আসেন তিনি। তার প্রত্যাবর্তনে ক্রিকেট ভক্তরা উচ্ছ্বসিত ছিলেন, কারণ এটি ছিল প্রায় চার বছর পর তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা। এরপর তিনি ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন এবং ৪টি ম্যাচে ৭টি উইকেট নেন। তবে পাকিস্তান দলের ভরাডুবি, বিশেষ করে গ্রুপ স্টেজে তাদের বাদ পড়া, আমিরের এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি তার অবসর ঘোষণায় বলেন, “যতটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন সিদ্ধান্ত কখনোই সহজ হয় না, তবে এটি অনিবার্য। আমি মনে করি যে এখন নতুন প্রজন্মের কাছে baton তুলে দেওয়ার সময় এসেছে, যাতে পাকিস্তান ক্রিকেট আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।”
আমিরের ক্যারিয়ার: উত্থান-পতন
মোহাম্মদ আমিরের ক্রিকেট জীবন ছিল এক রোলারকোস্টার রাইড। ২০০৯ সালে টিনএজ প্রতিভা হিসেবে উঠে আসেন তিনি এবং দ্রুতই নিজের স্থান নিশ্চিত করেন। ২০০৯ সালের টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জয়ে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম, আর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য তিনি পরিচিত।
তবে ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তার ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচে নো-বল করার জন্য তাকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এবং কিছুদিন জেলও খাটতে হয়।
২০১৬ সালে তিনি আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসেন এবং অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও নিজের জায়গা পুনরুদ্ধার করেন। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে ক্রিকেট জগতের আলোচনায় নিয়ে আসে।
দ্বিতীয় অবসরের কারণ
আমিরের দ্বিতীয় অবসরের পেছনে কিছু ব্যক্তিগত এবং পেশাদার কারণে রয়েছে। পাকিস্তানে নতুন পেসারদের উত্থান, যেমন শাহীন আফ্রিদি, হারিস রাউফ, এবং নাসিম শাহের জন্য খেলার জায়গা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। ৩২ বছর বয়সী আমির হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের খারাপ পারফরম্যান্সও তার অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এর সঙ্গে তার সম্পর্কও কখনোই মসৃণ ছিল না। ২০২০ সালে প্রথম অবসর নেওয়ার পেছনে পিসিবির সঙ্গে তার অমীমাংসিত বিষয় ছিল, আর ২০২৪ সালে ফিরে আসলেও এমন কিছু চাপ থাকতে পারে যা তার পুনরায় অবসর নেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমিরের উত্তরাধিকার
মোহাম্মদ আমির তার ক্যারিয়ারে অনেক বিতর্কের মুখোমুখি হলেও, তিনি পাকিস্তানের অন্যতম প্রতিভাবান ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে তার সেরা বোলিং এবং ২০০৯ সালের তরুণ প্রতিভা হিসেবে তার উত্থান, সবই ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি তার অবসর বার্তায় জানান, “আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করা, এবং তা চিরকাল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান। আমি পিসিবি, আমার পরিবার এবং বন্ধুদের এবং সবশেষে আমার ভক্তদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই তাদের নিরন্তর ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য।”
মোহাম্মদ আমিরের পরবর্তী কী?
আমির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে থাকবেন। টি২০ ক্রিকেটে তার দক্ষতা এখনও অনেক জনপ্রিয়, এবং তিনি পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), দ্য হান্ড্রেড এবং অন্যান্য বিশ্বব্যাপী টুর্নামেন্টে খেলা চালিয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ আমিরের অবসর ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তানের তরুণ পেসারদের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে, যারা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করেছে। আমিরের ক্যারিয়ার একটি অত্যন্ত প্রতিভাবান, উদ্ধারের এবং বিতর্কের গল্প হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।