Monday, February 24, 2025

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস: ফোর্ট উইলিয়ামে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বার্তা

Share

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই তারিখে বিকেল সাড়ে চারটায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়—বাংলাদেশের স্বাধীনতার। সেই ঐতিহাসিক দিনটি আজও স্মরণে বাঙালি ও ভারতীয় জাতি। প্রতিবছর বিজয় দিবস উদযাপনের মাধ্যমে এই স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত হয়।

এবার কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপিত হলো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিজয় দিবসে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি বলেন, “দেশের ইতিহাস চিরকাল এই বীর সেনানীদের অবদান স্মরণ করবে। তাঁদের আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন এক বিবৃতিতে লিখেছেন, “বিজয় দিবসে আমরা ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক বিজয়ের সাহসী সৈনিকদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বকে শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের দৃঢ় সংকল্প এবং নিঃস্বার্থ ত্যাগ আমাদের দেশকে রক্ষা করেছে এবং গৌরব এনে দিয়েছে। তাঁদের বীরত্ব চিরকাল আমাদের জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।”

ভারতীয় সেনাবাহিনীও এদিন তাদের এক্স হ্যান্ডলে (পূর্বের টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করে যুদ্ধের সেই গৌরবময় মুহূর্ত স্মরণ করায়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “মাত্র ১৩ দিনের যুদ্ধে ভারতীয় সেনারা ৯৩ হাজার পাক সেনাকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল। এটি বন্ধুর প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং শত্রুর প্রতি ভারতের শক্তির পরিচয়।”

বাংলাদেশে বিজয় দিবস উদযাপন

বাংলাদেশেও বিজয় দিবস উদযাপনের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রথমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিজয় দিবস উদযাপন করছে। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই দিনটি পালিত হয়। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও স্বাধীনতার আদর্শ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ। তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরিরা এখন অবৈধ সরকারের ছত্রছায়ায় রয়েছে। এটি স্বাধীনতার আদর্শের প্রতি চরম অবমাননা।” তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলার প্রচেষ্টার কথাও উঠে এসেছে বিভিন্ন আলোচনায়। তাঁর মূর্তি ভাঙচুর, ভবন ধ্বংস, এবং পাঠ্যসূচি থেকে তাঁর অবদান মুছে ফেলার মতো ঘটনাগুলো বর্তমান পরিস্থিতির সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

বিজয় দিবস কেবল একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি একটি জাতির জন্য গৌরবের প্রতীক। ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার অটুট সম্পর্কের নিদর্শন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি এই সম্পর্ক ও আদর্শকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ আশা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবিকৃত রেখে দু’দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই গৌরবময় ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।

Read more

Local News