সন্দীপ ঘোষ থেকে উত্তরবঙ্গ লবি
দক্ষিণ কলকাতার নামকরা অর্থোপেডিক সার্জন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ দাস, যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি এবিপি আনন্দের একান্ত সাক্ষাৎকারে একাধিক ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজনীতি, এবং উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার বক্তব্য রাজনীতির অন্দরমহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ডঃ শ্যামাপ্রসাদ দাস বলেন, “আমি কখনও সরকারি চাকরি করি নি, এবং সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অংশও নই। তবে, চিকিৎসক মহলে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরমহলে, একটা শব্দ প্রচলিত রয়েছে—আমি নাকি সব কিছু জানি।” তার এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্টতই এক ধরনের পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের জটিলতা এবং নানা গোপন বিষয় নিয়ে ইঙ্গিত করেছেন।
এছাড়া, তিনি স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেট রাজনীতির ব্যাপারেও নিজের মতামত দিয়েছেন। তার দাবি, “রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক ধরনের চাপ রয়েছে, যা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই সিন্ডিকেটগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ সুবিধা পায় না, শুধুমাত্র কিছু বিশেষ গোষ্ঠীই লাভবান হয়।” তার মতে, এই সিন্ডিকেট সংস্কৃতি শুধুমাত্র কলকাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও এটির প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে।
তিনি আরও বলেন, “সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেমন কিছু জায়গায় চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বল, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ কাজে হাত দেয়া হয়। এই বিষয়গুলো কারো অজানা নয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অসংখ্য কর্মকর্তার মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা এই সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে কাজ করছেন।” তার এই বক্তব্য রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য দফতরের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে।
ডঃ দাস আরো বলেন, “রাজ্যে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আরও জটিল। উত্তরবঙ্গের অনেক অংশে রাজনীতি এবং প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই গভীর যে, সেখানে সঠিকভাবে কাজ করা অনেক সময়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেখানে রাজনৈতিক লবির প্রভাব সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে।” তিনি উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি নজর দেয়ার প্রস্তাবও দেন।
তার সাক্ষাৎকারে সন্দীপ ঘোষের বিষয়েও আলোচনা উঠে আসে। সন্দীপ ঘোষ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি জানি না সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে আমার নাম কিভাবে জড়িয়ে আসছে, তবে কিছু মানুষ আছেন যারা এমন বিষয়গুলো নিয়ে গুজব ছড়ান।” তবে, তিনি বলেন, “বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে কিছু মানুষ দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে সেটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। কিন্তু, আমার কাছে এসব কিছুই নতুন নয়।”
ডঃ শ্যামাপ্রসাদ দাসের বিস্ফোরক মন্তব্যগুলো নিয়ে রাজ্য রাজনীতি এবং স্বাস্থ্য খাতে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরমহলের যে গোপন চর্চা এবং সিন্ডিকেট রাজনীতির কথা তিনি তুলেছেন, তা রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আরও বেশি তদন্তের দাবি তুলছে।
এদিকে, তার এই বক্তব্যের পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি, তবে রাজনৈতিক মহলে তার বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই তার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও, চিকিৎসক মহলে তার বক্তব্য নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
4o mini

