Tuesday, February 25, 2025

দিল্লিতে মমতার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ মডেল: মহিলাদের মাসে ১,০০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা, জয়ের পর অঙ্ক বৃদ্ধি

Share

লক্ষ্মীর ভান্ডার

দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলে কোনো দলের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি মাসিক নগদ অর্থ প্রদান প্রকল্প সেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার প্রভাবকে অনেকাংশেই হ্রাস করেছে। এবার দিল্লিতেও এমনই একটি প্রকল্পের ঘোষণা করলেন আম আদমি পার্টির নেতা এবং দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল।

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ থেকে দিল্লির ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা’

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালু করেছিলেন, যা মহিলাদের মাসিক আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এবার দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই মডেলই অনুসরণ করল আম আদমি পার্টি। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেজরীওয়াল ঘোষণা করেন, দিল্লির ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত মহিলার জন্য মাসে ১,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে জয়ী হলে এই অঙ্ক দ্বিগুণেরও বেশি, অর্থাৎ প্রতি মাসে ২,১০০ টাকা করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে কেজরীওয়াল মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরেন। তার মতে, মহিলারা এই অর্থ দিয়ে নিজেদের ছোটখাটো প্রয়োজন মেটাতে পারবেন এবং পরিবারের আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

মমতার মডেলের সাফল্যের প্রভাব

পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল। সাধারণ শ্রেণির মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি-জনজাতিভুক্ত মহিলারা ১,০০০ টাকা পেতে শুরু করেন। পরে এই অঙ্ক ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ১,০০০ এবং ১,২৫০ টাকা করা হয়। দিল্লির নতুন ঘোষণায় এই মডেলের ছায়া স্পষ্ট।

অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনেও দেখা গেছে, মহিলাদের নগদ অর্থ প্রদান প্রকল্পগুলি রাজনৈতিক দলগুলির সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠছে। কর্নাটক, তেলঙ্গানা এবং ঝাড়খণ্ডের সাম্প্রতিক নির্বাচনে এই ধরনের প্রকল্প বিরোধী দলগুলিকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে।

বিরোধীদের তির্যক মন্তব্য এবং পাল্টা যুক্তি

এই ধরনের প্রকল্প নিয়ে একসময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কটাক্ষ করে বলেছিলেন, এটি “রেউড়ি পলিটিক্স” বা “খয়রাতির রাজনীতি”। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিরোধিতার মেঘ কাটাতে বিজেপিকেও একই ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিজেপি জোটের সাফল্যের পেছনেও এই ধরনের প্রকল্পের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

দিল্লি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট

দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও এখনও নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি, তবে তার আগেই কেজরীওয়ালের এই ঘোষণা ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই প্রকল্পের জন্য দিল্লি সরকারের প্রতি মাসে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে আপের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কেজরীওয়াল পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এতটুকু স্পষ্ট, মমতার শুরু করা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ মডেল শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা দেশেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রভাব বিস্তার করছে।

শেষ কথা

মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এই প্রকল্প যে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে, তা আগের নির্বাচনী সাফল্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে। দিল্লির ভোটারদের মনে কতটা জায়গা করতে পারবে কেজরীওয়ালের ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা’, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত।

Read more

Local News