আসানসোল আদালতে কয়লা
কয়লা পাচার মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে অবশেষে চার্জ গঠন সম্পন্ন হল। মঙ্গলবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে এই মামলায় ৪৮ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতে হাজির করানো হয়। যৌন হেনস্থার আরেকটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি রয়েছেন বিকাশ। সেখান থেকেই তাঁর ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।
বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিল চার্জ গঠন
এতদিন মামলার চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া নানা কারণে বিলম্বিত হয়ে আসছিল। সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে প্রথমে ৫০ জন অভিযুক্তের নাম ছিল। তবে এর মধ্যে একজন অভিযুক্তের মৃত্যু হওয়ায় এবং আরেকজন, বিনয় মিশ্র, পলাতক থাকায় অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮-এ। গত ২৫ নভেম্বর চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া নির্ধারিত থাকলেও বিকাশ মিশ্রকে সশরীরে বা ভার্চুয়ালি হাজির করানো সম্ভব হয়নি। ফলে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী প্রক্রিয়াটি আরও এক দফা পিছিয়ে ১০ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন।
বিচারক প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, যদি বিকাশ ওই দিন পর্যন্ত জেলে থাকেন, তবে তাঁকে অন্তত ভার্চুয়ালি হাজির করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া, যৌন হেনস্থার মামলায় তাঁর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে কে কোথায়
মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়েই আদালতে সকল অভিযুক্ত হাজির ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন, বিকাশ-সহ, ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন। মামলাটি আদালতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দলে রয়েছেন ২৩ জন, যার মধ্যে আছেন অনুপ মাঝি ওরফে লালা, রতনেশ বর্মা, এবং বিকাশ মিশ্র। এই তিনজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাদের বিচারপ্রক্রিয়া আলাদা করে সম্পন্ন হবে।
বাকি ২৭ জনের মধ্যে কেউ কোলিয়ারির ম্যানেজার, কেউ নিরাপত্তারক্ষী, আবার কেউ স্থানীয় দোকানদার। সিবিআইয়ের তদন্তে দেখা গেছে, কয়লা পাচারের বিভিন্ন চক্রে তারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
কয়লা পাচার কাণ্ড: কীভাবে শুরু?
২০২০ সালে রেলের বিভিন্ন সাইডিং এলাকা থেকে কয়লা চুরির ঘটনা সামনে আসে। প্রথমে আয়কর দফতর এবং পরে সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তদন্তে দেখা যায়, অবৈধ কয়লা খনি থেকে কয়লা চুরি করে একাধিক চক্রের মাধ্যমে তা পাচার করা হচ্ছে। এই ঘটনায় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে স্থানীয় কর্মচারী, নিরাপত্তারক্ষী, এবং ব্যবসায়ীদের যোগসাজশের প্রমাণ মেলে।
কীভাবে এগোবে বিচার?
এখন চার্জ গঠন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে আদালতে নিয়মিত শুনানি শুরু হবে। বিশেষ করে প্রথম দলের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এই মামলার চূড়ান্ত রায় কবে হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে চার্জ গঠন শেষ হওয়ায় মামলার অগ্রগতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে।
শেষ কথা
কয়লা পাচার মামলাটি পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত বিতর্কিত ঘটনা। এই মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি কেবল অভিযুক্তদের শাস্তি নয়, সাধারণ মানুষের আইনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এখন নজর রাখছে রাজ্য।

