দিল্লির গাজ়িপুর সীমানায় রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সম্ভল
দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশের সম্ভল যাত্রার পথে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী পুলিশের বাধায় আটকা পড়েছেন। গাজ়িপুর সীমানায় তাঁদের আটকে দেওয়ার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, যা এলাকার মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
সম্ভল-যাত্রা এবং পুলিশের বাধা
বুধবার সকালেই দিল্লি থেকে রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশের সম্ভল যাওয়ার জন্য রওনা দেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সম্ভলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা। কিন্তু গাজ়িপুর সীমানায় পৌঁছাতেই তাঁদের যাত্রা আটকে দেয় পুলিশ। জানা যায়, নিরাপত্তার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, যার ফলে এলাকাতে বিশাল যানজট তৈরি হয়।
সম্ভলে সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
উত্তরপ্রদেশের সম্ভল এলাকায় সম্প্রতি গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জানা যায়, এই সংঘর্ষের ফলে কয়েকজনের মৃত্যু হয়, যা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। বিশেষ করে যোগী আদিত্যনাথের সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সংসদেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি অনেক দিন ধরেই অস্থির ছিল, এবং কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির নেতারা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শনের চেষ্টা করেছিলেন।
পুলিশি তৎপরতা এবং আটকানো
রাহুল গান্ধীর সম্ভল-যাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশ যথেষ্ট সতর্ক ছিল। গাজ়িয়াবাদ সীমানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত আঁটসাঁট করা হয়েছিল। সকালে রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশের দিকে রওনা দিলেও গাজ়িপুর সীমানায় পৌঁছাতেই তাঁদের যাত্রা থেমে যায়। পুলিশ তাদের উত্তরপ্রদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি, যার ফলে পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। রাহুলের সঙ্গে থাকা কংগ্রেস কর্মীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু পুলিশ তাঁদের বাধা দেয় এবং ধরপাকড় শুরু হয়।
পূর্ববর্তী ঘটনাবলি এবং পরিস্থিতি
প্রসঙ্গত, ১৯ নভেম্বর সম্ভলের স্থানীয় আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে দাবি করা হয়, মোগল সম্রাট বাবরের আমলে হরিহর মন্দির ভেঙে শাহি মসজিদ তৈরি হয়েছিল। মামলাটি দাখিল করার পরই সেখানে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে, বিশেষত ২৪ নভেম্বর সমীক্ষা চলাকালীন সময়ে। সংঘর্ষের কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কেও অভিযোগ উঠেছে।
উত্তেজনা বৃদ্ধির পর, যোগী আদিত্যনাথের সরকার ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্ভলে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে। এর পরেই সম্ভলের পরিস্থিতি পরিদর্শনে রাজ্যপাল গঠন করা বিচার বিভাগীয় কমিটি এলাকা পরিদর্শনে যায়। তবে, ১ ডিসেম্বর, সমাজবাদী পার্টির ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং ২ ডিসেম্বর কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশে প্রবেশের জন্য পুলিশের বাধার মুখে পড়ায় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির নেতারা যোগী আদিত্যনাথের সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন।
যানজট এবং জনগণের ভোগান্তি
পুলিশি বাধার কারণে গাজ়িপুর সীমানায় বিশাল যানজট সৃষ্টি হয়েছিল, যা সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। দির্ঘ সময় ধরে যানবাহন আটকে থাকার কারণে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত সময় ও কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি করেছে।
উপসংহার
রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সম্ভল-যাত্রার আটকালো ঘটনাটি রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পুলিশি বাধার কারণে তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিদর্শনে যেতে না পারলেও, বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন পরিবর্তন হয়।

