Monday, December 1, 2025

জঙ্গি হামলার শঙ্কা: বাংলাদেশে ভ্রমণে ব্রিটেনের সতর্কতা

Share

জঙ্গি হামলার শঙ্কা

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে ব্রিটেন তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে এই সতর্কতার কথা জানিয়েছে। এতে নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে ভ্রমণ এড়াতে এবং বিশেষ করে কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় না যাওয়ার জন্য।

বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার উদ্বেগ

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্রিটেনের দূতাবাস থেকেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষত বিদেশিদের লক্ষ্য করে। এই কারণে বাংলাদেশের কয়েকটি স্পর্শকাতর জায়গায় ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমি

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতা শুরু হয় গত আগস্টে, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে চলে যান। এর ফলে আওয়ামী লীগের শাসনের পতন ঘটে এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

নতুন সরকারের অধীনে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। নভেম্বরের শেষ দিক থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসসহ আরও কয়েকজন ধর্মীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ফলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে, যা ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় ভারত থেকেও নিন্দা জানানো হয়েছে। দিল্লি থেকে বারবার ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। যদিও বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে যে সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন।

ব্রিটেনেও এই ইস্যু উঠে এসেছে। সেখানকার পার্লামেন্টে বিরোধী কনজারভেটিভ দলের সাংসদরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আলোচনার দাবি তুলেছেন। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ভ্রমণে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে।

ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরামর্শ

ব্রিটেনের এই নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, নাগরিকদের উচিত বাংলাদেশের স্পর্শকাতর এলাকা এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজন হলে স্থানীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। ব্রিটেনের এই সতর্কতার পেছনে শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গি হামলার শঙ্কা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

বাংলাদেশে বর্তমানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনাগুলো পরিস্থিতি আরও অস্থির করে তুলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। ব্রিটেন, ভারতসহ অন্যান্য দেশ বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশে বসবাসরত বা ভ্রমণরত ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য এই সতর্কতা শুধু তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই দেওয়া হয়েছে। তবে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা শুধু দেশীয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে।

এই ধরনের পরিস্থিতি কেবলমাত্র ভ্রমণের ক্ষেত্রেই নয়, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপরও ছায়া ফেলতে পারে। বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই দেশটির নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

Read more

Local News