ত্রিপুরায় হামলার পর উত্তপ্ত বাংলাদেশ
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার ঘটনা দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার পর বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
হামলার প্রেক্ষাপট
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারত। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে বলেছে, “কোনো দেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসকে নিশানা করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।” ঘটনার পরপরই দিল্লি বাংলাদেশের প্রশাসনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায়।
বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশেই বিক্ষোভ ও উত্তেজনা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
ঢাকায় বিক্ষোভ
সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখা যায়। সেখান থেকে ভারত-বিরোধী স্লোগান শোনা গেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়। বিক্ষোভকারীরা ত্রিপুরার ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করে। ঢাকার গুলশনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ জানিয়েছেন, “গুলশনে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।” একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ অন্যান্য স্থানের ভারতীয় উপদূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে।
চট্টগ্রামে উত্তেজনা
ত্রিপুরার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চট্টগ্রামেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের আদালতে সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জামিন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সোমবার রাতেই সেখানে বিক্ষোভ হয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
বাংলাদেশের ‘প্রথম আলো’ সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতীয় দূতাবাস ও উপদূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। ঢাকার পুলিশ প্রধান বাহাদুর আলম জানিয়েছেন, “গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাসগুলোর সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি।”
উত্তেজনা কমানোর আহ্বান
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার প্রয়োজন। দুই দেশই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো জরুরি।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার ঘটনা দুই দেশের মধ্যে একটি স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠেছে। দুই দেশের সরকারই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে উভয় পক্ষেরই আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিক্ষোভ ও ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপ শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।