তথ্যের বিশ্লেষণে
বর্তমানে তথ্য এবং তার বিশ্লেষণ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারে এর গুরুত্ব আরও বাড়ছে। এই বিষয়ে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী শঙ্করকুমার পাল, যিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (ISI) প্রাক্তন অধিকর্তা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট। তিনি উল্লেখ করেছেন, তথ্য এবং তার গভীর বিশ্লেষণ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘প্রচুর তথ্য এবং তার সঠিক বিশ্লেষণ— এই দুইয়ের ওপর নির্ভর করে আমরা ভবিষ্যতে সফল হতে পারব।’
শঙ্করকুমার পাল তার বক্তৃতায় জানিয়েছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কার্যকর ব্যবহার শুরু হওয়ার জন্য প্রথমেই যন্ত্রকে ‘প্যাটার্ন চিনতে শেখানো’ প্রয়োজন। অর্থাৎ, যন্ত্রটি আগে বুঝতে পারবে না কোন তথ্যটি কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারে, তাই তাকে আগে সঠিক প্যাটার্ন বা আদর্শ চিহ্নিত করতে হবে। এ কাজের মাধ্যমে যন্ত্র বিপুল পরিমাণ তথ্য থেকে সঠিক তথ্য চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে, যা পরবর্তীতে আরও উন্নত বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে যাবে।
এ দিনের বক্তৃতায় তিনি গত পঞ্চাশ বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। ১৯৭০-এর দশকের ‘প্যাটার্ন রিকগনিশন’ থেকে আজকের ‘ডেটা লার্নিং’ পদ্ধতির বিবর্তনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা কীভাবে ক্রমাগত বাড়ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারকারী যন্ত্র কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে— তা নিয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
শঙ্করকুমার পাল তার বক্তৃতায় কীভাবে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায়, তা দৃষ্টান্তসহ সহজভাবে তুলে ধরেন। তিনি দেখান, যন্ত্র প্রথমে কিছু নিয়ম শিখে, সেই নিয়ম অনুযায়ী নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে অভিযোজিত করে এবং সময়ের সঙ্গে তা আরও উন্নত হয়। যন্ত্রের মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে, যেখানে প্রতিটি তথ্য একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসরণ করে যন্ত্রটি শিখতে থাকে।
অধ্যাপক কৌস্তুভ সান্যাল, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অধিকর্তা, এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটির গত এক বছরের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের বিজ্ঞানীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বহু পুরস্কার এবং ফেলোশিপ অর্জন করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই প্রতিষ্ঠানে গত এক বছরে ২৮ জন পিএইচডি লাভ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অগ্রগতি আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।’
এ দিন বক্তৃতার সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া, যিনি নিজের বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, যারা একসাথে বৈজ্ঞানিক সমাজে তথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবদান নিয়ে আলোচনা করেন।
বিভিন্ন শাখায় বিজ্ঞানীদের এই অগ্রগতি শুধু তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে নয়, বরং পুরো দেশ ও বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ করছে, অন্যদিকে এর মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনও সামনে আসছে। তথ্য এবং তার বিশ্লেষণ ভবিষ্যতের উদ্ভাবনগুলির জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠছে, এবং এগুলির সাহায্যে আমরা আরও উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং আরও অনেক চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে পাব।
এভাবে, এই ধরনের আলোচনা এবং গবেষণা আমাদের ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেখানে তথ্যের বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগান্তকারী ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আরও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।