মাত্র হাজার টাকা লগ্নিতেই কেল্লাফতে
১০ বছর আগে মাত্র হাজার টাকা লগ্নি করে আজ কোটিপতি হয়েছেন বহু মানুষ। বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে বিটকয়েনের বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে। ২০০৯ সালে বিশ্ব বাজারে চালু হওয়া এই ডিজিটাল মুদ্রা বর্তমানে প্রায় এক লক্ষ ডলারে পৌঁছেছে। তবে, বিটকয়েনের এই রমরমা শুরু হয়েছিল অনেক আগে, যখন তার দাম ছিল অতি নগণ্য। আসুন জানি কীভাবে এই ডিজিটাল মুদ্রা দশ বছরের মধ্যে এমন রূপান্তর ঘটাল।
বিটকয়েনের শুরু ও প্রথম দাম
২০০৯ সালে বিটকয়েন চালু হওয়ার পর প্রথমে এর কোনো তেমন দাম ছিল না। ২০১০ সালে প্রথমবার লেনদেনে ব্যবহৃত হয় বিটকয়েন, এবং তখন এক বিটকয়েনের বাজারমূল্য ছিল মাত্র ০.০৮ ডলার। অর্থাৎ, এক বিটকয়েন কিনতে খরচ হতো শুধুমাত্র কয়েক সেন্ট। ভারতীয় মুদ্রায় তখন এর দাম ছিল মাত্র ৩.৩৮ টাকা, কারণ এক ডলারের গড় দাম ছিল ৪২ টাকা।
বিটকয়েনে হাজার টাকা লগ্নির ফল
ধরা যাক, ২০১০ সালে আপনি হাজার টাকা লগ্নি করলেন বিটকয়েনে। তখন ৩.৩৮ টাকায় এক বিটকয়েন পাওয়া যেত, ফলে আপনি ২৯৫.৮৫টি বিটকয়েন পেতেন। এক হাজার টাকার বিনিময়ে পাওয়া এই বিপুল পরিমাণ বিটকয়েনের বর্তমান বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে এক বিশাল অঙ্কে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে বিটকয়েনের গড় দাম পৌঁছেছে ৯৮ হাজার ডলারে। ভারতীয় টাকার হারের সঙ্গে এটি মেলালে, এক বিটকয়েনের দাম প্রায় ৮২ লক্ষ ৭৬ হাজার ১০০ টাকা। অর্থাৎ, আপনার ২৯৫.৮৫টি বিটকয়েন বর্তমানে ২৪৪৭ কোটি ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ১৮৫ টাকার সমান হয়ে গেছে।
বিটকয়েনের অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি
এটি যে সাধারণ একটি বিনিয়োগ নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে বিটকয়েনের ইতিহাস দেখে। ২০১০ সালে যখন দুটি পিৎজা কেনার জন্য ১০ হাজার বিটকয়েন খরচ হয়েছিল, তখন অনেকেই মুচকি হেসেছিলেন। কিন্তু, কয়েক বছর পরই বিটকয়েনের মূল্য আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালে এক বিটকয়েনের দাম দাঁড়ায় ২০ হাজার ডলার, যা নতুন এক মাইলফলক তৈরি করে।
বিটকয়েনের জনপ্রিয়তার উত্থান
২০২০-২১ সালে বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে যখন ইলন মাস্কের টেসলা কোম্পানি বিটকয়েনে লগ্নি করতে শুরু করে। এর পর, বিটকয়েনের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২৩ সালে আমেরিকার শেয়ার বাজারও বিটকয়েনকে স্বীকৃতি দেয়, যা তার বাজারমূল্য আরও শক্তিশালী করে তোলে।
ভবিষ্যতের প্রেক্ষিত
বিটকয়েনের এই উত্থান শুধুমাত্র ক্রিপ্টো মুদ্রার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়নি, বরং এটি অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার প্রতি বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকেও পাল্টে দিয়েছে। যদিও বিটকয়েনের বাজারে ওঠানামা থাকতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা আজও এই ডিজিটাল মুদ্রাকে একটি লাভজনক বিকল্প হিসেবে দেখছেন।
এই অদ্ভুত গল্প থেকে আমরা শিখতে পারি যে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যে কাউকে একজন কোটিপতি বানাতে পারে, তা বিটকয়েনের উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট। ১০ বছর আগে হাজার টাকার বিনিয়োগ আজ আড়াই হাজার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে, যা বিটকয়েনের অদ্বিতীয় বৃদ্ধির সাক্ষী।