Monday, December 1, 2025

আদানি ‘ঘুষকাণ্ড’: ভারতের সংসদে ঝড়, তবে ‘আইনি’ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না আমেরিকার বিদেশ দফতর

Share

আদানি ‘ঘুষকাণ্ড’

গত সোমবার ভারতের সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল, একটিই বিষয় ছিল আলোচনার কেন্দ্রে—আদানি ‘ঘুষকাণ্ড’। আমেরিকার আদালত সম্প্রতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে, আর এ নিয়ে সংসদে তুমুল হইচই দেখা গেছে। কিন্তু একদিকে যখন ভারতের সংসদে এই প্রসঙ্গে তীব্র আলোচনা চলছে, অন্যদিকে আমেরিকার বিদেশ দফতর এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না, বরং তারা আইনি বিষয়ে মন্তব্য করার থেকে বিরত থাকতে চায়।

আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সোমবার জানান, এই ব্যাপারে যা বলার, তা বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা বলবেন। আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকি এড়াতে চাইছে, তাই তারা সাবধানী অবস্থান নিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘এই বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনি’, এবং এর কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে অনেকেই মনে করছেন, এমন মন্তব্য আসলে আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের সতর্কতার কারণে।

ভারতের সংসদে বিরোধী দলগুলো সোমবার দাবি জানায়, আদানি ঘুষকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হোক। সংসদে ওই দিন হইহট্টগোলের কারণে, কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এরপর সংসদ সচিবালয় জানায়, মঙ্গলবার সংবিধান দিবস উপলক্ষে অধিবেশন স্থগিত থাকবে, কিন্তু বুধবার সকাল ১১টায় আবার কার্যক্রম শুরু হবে।

আমেরিকার আদালতের নতুন অভিযোগে বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী এবং তাদের সংশ্লিষ্টরা একাধিক সরকারি আধিকারিককে ঘুষ প্রদান করেছেন। এই ঘুষের মাধ্যমে তারা অন্ধ্রপ্রদেশসহ বেশ কিছু রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেয়েছে। অভিযোগ, এই টাকা আদানি গোষ্ঠী আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে, যা বেআইনি এবং মার্কিন আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়। এতে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

এর আগে, আমেরিকার আদালতে এই অভিযোগ উঠলে আদানি গোষ্ঠী বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে একটি বিবৃতি দেয়। তারা জানায়, তাদের নথিবদ্ধ সংস্থাগুলির হাতে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ রয়েছে, যা দিয়ে আগামী এক বছরের মধ্যে ঋণের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব। যদিও বিষয়টি এখনো আইনি দিক থেকে ঝুলে রয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

এই সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আদানি গোষ্ঠী থেকে কিছু সরকারি আধিকারিকদের মধ্যে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, উচ্চমাত্রার শাসকগোষ্ঠীর এই ধরনের দুর্নীতি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। তবে আদানি গোষ্ঠী দাবি করেছে, তারা কোনো অনৈতিক বা বেআইনি কাজ করেনি এবং সব কিছু আইনের মধ্যে থেকেই হয়েছে।

পরবর্তী সময়ে, ভারতের সংসদে এই বিষয়টির প্রতি নজর রাখার পাশাপাশি, আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা অনেকেই প্রকাশ করেছেন। তবে যে কোনো দেশীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি এখন কার্যত বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে, এবং একমাত্র তা সঠিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরই আদানি গোষ্ঠীর ভবিষ্যত নির্ধারণ হবে।

এখন, যা পরিষ্কার তা হল, আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে এই ঘুষকাণ্ডের বিষয়টি এক দীর্ঘ আইনি যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে, যার প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কের ওপর পড়তে পারে।

Read more

Local News