Thursday, February 13, 2025

ভান্ডারই মহিলাদের ভোটের লক্ষ্মী! ‘মমতা মডেল’ কি সাফল্যের চাবিকাঠি?

Share

ভান্ডারই মহিলাদের ভোটের লক্ষ্মী

বাংলার লক্ষ্মীর ভান্ডার মডেল যেন এখন সারা দেশে মহিলাদের ভোট টানার প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবর্তিত এই মডেল শুধু রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডসহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল এই প্রবণতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

মমতা মডেল: সাফল্যের সূচনা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উদ্যোগ ছিল ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। এরপর তিনি চালু করেন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, যা মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা ও ক্ষমতায়নে অনন্য ভূমিকা পালন করে। বাংলার তৃণমূল সরকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ প্রদান শুরু করেছিল, যা নির্বাচনে দলের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। এই মডেলের সাফল্য প্রমাণ করেছে, মহিলাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং তা রাজনৈতিক কৌশলের অংশও হতে পারে।

মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে ‘ভান্ডার রাজনীতি’

মহারাষ্ট্রের শিন্ডে সরকার ‘লাড় কি বহিন’ প্রকল্প চালু করেছিল, যেখানে নারীদের মাসে ১৫০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। নির্বাচনের আগে পাঁচ মাসের টাকা একত্রে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের সরকার ‘মাইয়া সম্মান’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের মাসে ১০০০ টাকা করে প্রদান শুরু করে।

এই দুটি প্রকল্পই নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। মহারাষ্ট্রে মহিলা ভোটারের হার ৬ থেকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা মূলত শাসক জোটের পক্ষে গেছে। ঝাড়খণ্ডেও মহিলা ভোটাররা বড় ভূমিকা পালন করেন, যা হেমন্ত সোরেনকে ক্ষমতায় ফেরার পথ সুগম করেছে।

‘খয়রাতি’ নাকি কার্যকর কৌশল?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অতীতে এই ধরনের প্রকল্পকে ‘খয়রাতির রাজনীতি’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি-সহ সব দলই এখন এই পথে হাঁটছে। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চৌহানের ‘লাডলি বহনা’ প্রকল্প এবং কর্নাটকে কংগ্রেসের ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্প এই প্রবণতাকে আরও জোরালো করেছে। মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ভোট রাজনীতিতে শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠছে, যা একাধিক রাজ্যের নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে।

আর্থিক বোঝা এবং সম্ভাবনা

এই ধরনের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি রাজ্যের অর্থনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে, মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ আসায় বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে গতিশীল করছে। অন্যদিকে, রাজ্যের আর্থিক সংস্থান জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যয় হওয়ায় শিল্প ও পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

তবুও, এই প্রকল্পগুলির সাফল্য রাজনীতির ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও চলছে।

দেশজুড়ে ‘মমতা মডেল’?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ যে সারা দেশে প্রভাব ফেলেছে, তা স্পষ্ট। অন্যান্য রাজ্যেও তার মডেলের অনুকরণ চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারও এই মডেল অনুসরণ করে একটি জাতীয় প্রকল্প চালু করতে পারে। যদি তা হয়, তবে মমতার প্রবর্তিত মডেল আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

Read more

Local News