বালুচিস্তানে চিনা নাগরিকদের উপর হামলার
চিনের নাগরিকদের উপর একের পর এক হামলার পর বেজিংয়ের চাপে পাকিস্তান বালুচিস্তানে একটি বড় সেনা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে বালুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী বালুচ বিদ্রোহীরা আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ১৯ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, এবং সেখানেই বালুচিস্তানে সেনা অভিযান শুরুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, এই অভিযানের লক্ষ্য বালুচিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে নিশ্চিহ্ন করা। পাকিস্তানের সেনা অভিযানে প্রথমে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং তাদের আত্মঘাতী বাহিনী মাজিদ ব্রিগেডকে টার্গেট করা হবে। এছাড়া, বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এবং বালোচ রাজি আজোই সঙ্গরকে (বিআরএএস) সহ অন্যান্য বিদ্রোহী সংগঠনগুলিও অভিযানের আওতায় আসবে।
বালুচিস্তান, পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ হলেও, এখানকার বাসিন্দাদের জন্য আর্থিক উন্নতি নেই। সিপিইসি (চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর) প্রকল্পের মাধ্যমে চিন এখানে বৃহৎ বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু স্থানীয় বালুচরা এই উন্নয়ন থেকে কিছুই পাচ্ছেন না। বরং, তাদের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে এবং প্রকল্পের নামে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলস্বরূপ, বালুচ স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলি বারবার এই প্রকল্পে হামলা চালিয়েছে, এবং এর মধ্যে চিনা নাগরিকদেরও প্রাণ গেছে।
পাকিস্তান সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি বালুচিস্তানে সেনা অভিযান ব্যাপক রূপ নেয়। এর পাশাপাশি, চিনা সেনা পাকিস্তানে প্রবেশ করারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তান সরকার দুই উদ্দেশ্যে অভিযান চালানোর চেষ্টা করছে: প্রথমত, বিদ্রোহী বালুচদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ, এবং দ্বিতীয়ত, বেজিংয়ের সন্তুষ্টি বজায় রেখে চিনা প্রকল্পগুলির কাজ চালিয়ে যাওয়া।
তবে, পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ)। তাদের মতে, দেশে সামরিক অভিযান চালানোর ফলে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্বের বৃহত্তম খনিজসম্পদসমৃদ্ধ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও, বালুচিস্তান আজও পাকিস্তানের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। এখানকার বাসিন্দাদের ৭০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, বালুচিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু হলে তা প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে থাকা তালিবান শাসকদের সহায়তাও পেতে পারে।
বালুচিস্তানে সেনা অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চিনা সেনাও পাকিস্তানে প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে।