শীতের পথে ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজ়ল’
বাংলার আকাশে শীতের আমেজ আসতে না আসতেই ঘূর্ণিঝড়ের ছায়া নেমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারতের মৌসম ভবন (আইএমডি) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে আবার একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের মতে, আন্দামান সাগরে ইতিমধ্যেই একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে রূপান্তরিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে ‘ফেনজ়ল’, যা সৌদি আরবের দেওয়া।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ এবং বর্তমান পরিস্থিতি
বুধবার এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস সামনে আসার পর থেকেই এর প্রভাব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আগের ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’, যার নামকরণ করেছিল কাতার, ওড়িশায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। নতুন ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হলে সেটির প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে আন্দামান সাগর ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণাংশে একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় হয়েছে। এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
সম্ভাব্য প্রভাব ও সতর্কবার্তা
আবহাওয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য পরিবেশ যথেষ্ট অনুকূল থাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি ওড়িশা বা বাংলার দিকে সরাসরি আসার আশঙ্কা নেই। বরং এটি দক্ষিণ ভারতের উপকূল, বিশেষত অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর দিকে সরে যেতে পারে। পাশাপাশি, শ্রীলঙ্কার উত্তর উপকূলেও প্রভাব পড়তে পারে।
মৌসম ভবনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী শনিবার বা রবিবারের মধ্যে এটি মূল ভূখণ্ডের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। প্রাথমিক সতর্কবার্তায় তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেরল ও মাহেতে বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ফেনজ়লের প্রভাব কি শীতকে থমকে দেবে?
দক্ষিণবঙ্গে সদ্য শুরু হওয়া শীতের আমেজ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাহত হতে পারে কি না, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় এবং শীতল বায়ুর প্রবাহের মধ্যে পারস্পরিক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এবারকার শীতের তীব্রতা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কতটা কমবে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এই ঘূর্ণিঝড় যদি বাংলার উপকূল বরাবর না এসে দক্ষিণ দিকে সরে যায়, তাহলে শীতের প্রভাব খুব একটা বাধাগ্রস্ত হবে না।
‘ডেনা’র অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা
অক্টোবরের ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’ ওড়িশায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছিল। প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণে ওড়িশার ১৪টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আবহাওয়া দফতর ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এবং উপকূলবর্তী এলাকায় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছে।
প্রস্তুতি এবং করণীয়
বর্তমানে ‘ফেনজ়ল’-এর সম্ভাব্য গতিপথ ও প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে মৌসম ভবনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হলেও তা বাংলার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না। দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় রাজ্যগুলিকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশকে।
শীত আসার প্রাক্কালে এই ঘূর্ণিঝড় রাজ্যের আবহাওয়ার উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত রাজ্যবাসী শীত ও ঘূর্ণিঝড়—দুইয়ের প্রভাবের মধ্যে সমতা খুঁজে চলেছেন।