Friday, February 7, 2025

সিপিএমের বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে তৃণমূল: বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে দ্বৈত ভূমিকা নিচ্ছে শাসকদল

Share

সিপিএমের বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে তৃণমূল

গত শুক্রবার কসবায় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের উপর হামলার ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। এই ঘটনার পরপরই তৃণমূল নেতারা নিজেদের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগে মেতে ওঠেন। রাজ্যে বিরোধীদের দুর্বল অবস্থানে থাকা এবং তাদের কার্যকর আন্দোলনের অভাবই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে অনেকে মনে করছেন। শাসক দলের ভেতর থেকেই ‘বিরোধী স্বর’ উঠে আসায় রাজনীতিতে তৃণমূলের দ্বৈত ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে।

তৃণমূলই শাসক, তৃণমূলই বিরোধী

তৃণমূল নেতাদের প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রবণতা সিপিএম জমানার পুরনো অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সিপিএমের রাজত্বে নেতাদের মধ্যে মতাদর্শগত সংঘাতের ঘটনা প্রায়ই সামনে আসত। তেমনই বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল নেতারাই সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করছেন, আবার অন্য কেউ সেই নেতার ক্ষমতা নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন।

তৃণমূলের কুণাল ঘোষ এই বিষয়ে বলেন, “তৃণমূলই সব অংশের মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিফলন ঘটায়। তাই দলেই বিভিন্ন মত উঠে আসছে।” তবে তৃণমূলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা রসিকতা করে বলেন, “এটা ফ্রিস্টাইল সাঁতার! তৃণমূল ‘রেজিমেন্টেড’ দল নয়। এখানে সবাই নিজের মতো কথা বলে। বিষয়টা উপভোগ্য হলেও ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।”

সিপিএম বনাম তৃণমূল: সংঘাতের ভিন্ন রূপ

সিপিএমের শাসনকালে দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব ছিল প্রধানত মতাদর্শগত। কিন্তু তৃণমূলে সংঘাত মূলত ব্যক্তিগত ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে। সিপিএম জমানায় যেমন অমিতাভ নন্দী বনাম সুভাষ চক্রবর্তীর দ্বন্দ্ব ছিল পরিচিত বিষয়, তেমনই আজকের তৃণমূলে সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসছে।

তৃণমূলের ক্ষেত্রে সংঘাত শাসক দলের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। শরিক দলগুলোর অভাবের কারণে এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। অন্যদিকে, সিপিএমের সময়ে বামফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সংঘাতও বড় সমস্যা ছিল।

বিরোধীদের ব্যর্থতা: রাজনীতিতে প্রভাব

তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হলো রাজ্যে কার্যকর বিরোধী দলের অভাব। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় নাগরিক আন্দোলন যে প্রবল স্বর তুলেছিল, তা বিরোধী দলের হয়ে ওঠার বদলে দলহীন থেকে গেছে। এতে বিরোধীদের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমশ কমে আসছে। বিজেপি এবং সিপিএম উভয়ই বিরোধী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যে বিরোধী দলের কার্যত অনুপস্থিতির কারণেই তৃণমূলের মধ্য থেকে বিরোধী স্বর উঠে আসছে। যেমন আরজি কর কাণ্ডে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে শাসক দলের ভেতরেই সমালোচনা শুরু হয়েছিল।

বিরোধী ‘স্বর’ তৃণমূলেই সীমাবদ্ধ

তৃণমূল নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা কাটাকাটি এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দলটির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও তৃণমূল নেতারা এটিকে দলের গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছেন, বিরোধীরা এই ঘটনাগুলোকে তৃণমূলের ভঙ্গুর অবস্থার নিদর্শন বলে ব্যাখ্যা করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে শাসক দল নিজেই বিরোধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। তৃণমূলের এই দ্বৈত ভূমিকা রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যৎ চিত্রকে কেমন রূপ দেবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Read more

Local News