Saturday, February 8, 2025

খালি পায়ে কাদায় দৌড়: শামির প্রত্যাবর্তনের রহস্য এবং অদম্য অধ্যবসায়

Share

খালি পায়ে কাদায় দৌড় শামির

মহম্মদ শামির ক্রিকেট জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এক অন্যরকম গল্প লুকিয়ে আছে। ৩৪ বছর বয়সেও তাঁর লড়াই করার মানসিকতা এবং শারীরিক সক্ষমতা দেখে মুগ্ধ তাঁর প্রাক্তন কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি। শামির সাম্প্রতিক প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে তাঁর অদম্য পরিশ্রম এবং নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস।

ফিটনেসের জন্য নিজের পরীক্ষা

বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (এনসিএ) থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার আগেই শামি নিজেই নিজের ফিটনেস যাচাই করেন। উত্তরপ্রদেশের আমরোহার খামারবাড়িতে কাদামাটির উপর দৌড়ে তিনি নিজেকে পরীক্ষা করেন। তাঁর কোচ সিদ্দিকি জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি শামির নিজস্ব। কাদায় পা আটকে যায়, ফলে শরীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং ভারসাম্য পরীক্ষার জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। পুরোপুরি ফিট না হলে শামি কখনোই মাঠে নামতেন না। কাদায় দৌড়ানোর মাধ্যমে তিনি বুঝে নিয়েছিলেন যে তিনি প্রস্তুত।

চোট থেকে ফিরে আসা: কঠিন অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত

গত বছরের নভেম্বর মাসে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার পর থেকেই চোটের কারণে শামি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর হাঁটুর অস্ত্রোপচার হয়, এরপর ক্রাচ নিয়ে দীর্ঘদিন হাঁটতে হয়েছে। ধীরে ধীরে এনসিএ-তে রিহ্যাবের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা ফিরে পান। তবে শামি কখনোই আশা হারাননি। একাধিক গুজব উঠলেও, শামি জানতেন কখন এবং কিভাবে তিনি মাঠে ফিরবেন। রঞ্জি ট্রফির পঞ্চম ম্যাচে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে মাঠে নেমে তিনি চার উইকেট নিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনি আগের মতোই ধারালো।

কোচের মূল্যায়ন: এখনও তিন বছর খেলবেন

বদরুদ্দিন সিদ্দিকি, যিনি ১৫ বছর বয়স থেকে শামিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, মনে করেন শামি আরও তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে সক্ষম। তাঁর মতে, শামির মানসিক শক্তি এবং শারীরিক সক্ষমতা এই বয়সেও অনন্য। কোচের ভাষায়, “শামির মধ্যে এখনও সেই আগুন রয়েছে, যা তাঁকে এতদিন সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।”

শামির ক্রিকেট সফর: একজন তারকার উত্থান

উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে উঠে আসা শামি কলকাতায় এসে বাংলা দলের হয়ে নিজের জায়গা পাকা করেন এবং এরপর ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন। ৬৪টি টেস্টে তিনি ২২৯টি উইকেট, ১০১টি এক দিনের ম্যাচে ১৯৫টি উইকেট এবং ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৪টি উইকেট নিয়েছেন। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে তিনি ৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার ছিলেন। তাঁর সুইং এবং পেস যে কোনও ব্যাটারের কাছে ভয়ের কারণ।

খামারবাড়িতে তৈরি হওয়া শামির ‘ক্রিকেট ল্যাব’

কোভিডের সময়, যখন অধিকাংশ ক্রিকেটার অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তখন শামি উত্তরপ্রদেশের আমরোহার খামারবাড়িতে তৈরি নেটে অনুশীলন চালিয়ে যান। ১৫০ বিঘা জমির এই খামারবাড়িতে রয়েছে একাধিক পিচ এবং আধুনিক অনুশীলন সুবিধা। এখানেই তিনি নিজের ফিটনেস ফিরিয়ে আনেন এবং কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান। শুধু নিজের জন্য নয়, সুরেশ রায়না এবং ভুবনেশ্বর কুমারের মতো ক্রিকেটাররাও এখানে অনুশীলন করেছেন।

প্রত্যাবর্তনের মূলমন্ত্র: মানসিক শক্তি এবং পরিশ্রম

শামি নিজেই একবার বলেছিলেন, “আমি কঠোর পরিশ্রম করি। যতবার পড়ব, ততবার উঠে দাঁড়াব।” তাঁর এই মানসিকতা এবং অধ্যবসায়ই তাঁকে বারবার প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে। মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁর সাফল্য এই প্রত্যাবর্তনের সাক্ষ্য বহন করে।

মহম্মদ শামি শুধু একজন ক্রিকেটার নন, তিনি কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তাঁর এই মানসিকতা এবং শারীরিক সক্ষমতা তাঁকে আরও অনেক দিন ক্রিকেট মাঠে দেখতে সাহায্য করবে।

Read more

Local News