অনীত থাপার ক্ষমতার প্রসার
দার্জিলিং ও উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের নেতা অনীত থাপার ক্ষমতা সম্প্রতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তৃণমূলের প্রশাসনিক উপস্থিতি ও কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক সময় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করা অনীত, পরবর্তীকালে বিমল গুরুংয়ের আধিপত্যের বিরুদ্ধে নিজের আলাদা রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেন। এই প্রেক্ষিতে মমতার সরকার অনীতকে আরও ক্ষমতায়ন করে স্থানীয় উন্নয়ন ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন।
উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙা-গড়া: একক কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনিক গতি বৃদ্ধি
পাহাড়ের জনজাতির উন্নয়নে গঠিত ১৬টি পৃথক উন্নয়ন বোর্ডকে সম্প্রতি ভেঙে নতুন একটি তদারকি কমিটির অধীনে আনা হয়েছে। এর নেতৃত্বে থাকবেন অনীত থাপা, যা তাকে প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয়ে বড় ধরনের ক্ষমতা প্রদান করে। এর ফলে তিনি শুধু উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ব্যবস্থাপনাই করবেন না, বরং সেগুলির আর্থিক হিসাব-নিকাশও পরিচালনা করবেন। স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে, এতে করে উন্নয়নের গতি বাড়বে এবং কেন্দ্রীয় তদারকি আরও কার্যকরী হবে।
তৃণমূলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং মমতার কৌশল
তৃণমূল কংগ্রেস বহু বছর ধরে পাহাড়ি জনমানসে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তোলা সত্ত্বেও তিনটি বিধানসভা আসনে তৃণমূল এখনও শক্ত ভিত তৈরি করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনীত থাপার ওপর ভরসা করে পাহাড়ি জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংয়ের পদত্যাগের পর এই প্রশাসনিক নিয়োগ তৃণমূলের নতুন কৌশলকে সামনে নিয়ে আসে, যেখানে স্থানীয় নেতৃত্বের মাধ্যমেই পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ: ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং আলোচনা
অনীত থাপার ক্ষমতার এই প্রসার উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত পাহাড়ে একক আধিপত্য তৈরি করতে পারে। যদিও মমতা এই সিদ্ধান্তকে প্রশাসনিক গতিশীলতার প্রয়োজনীয় অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন, তবু বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, এতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং অনীতের হাতে একক ক্ষমতা দেওয়া পাহাড়ে নতুন ধরনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে।
পাহাড়ের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও মমতার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা
২০১৭ সালের পর পাহাড়ের অর্থনৈতিক অবস্থা কঠিন সময়ে পড়েছিল, যার ওপর কোভিড মহামারীর ধাক্কা আরও প্রভাব ফেলে। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তিনি নিয়মিত পাহাড়ে সফর করেছেন, প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন এবং স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছেন। শাসক দলের মতে, তৃণমূল রাজনৈতিক আস্থায় না থাকলেও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পাহাড়ের জনগণের সমর্থন পেয়েছে।
ভবিষ্যতের দিকে নজর
অনীত থাপার ক্ষমতার বৃদ্ধি একদিকে যেমন পাহাড়ে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে পারে, অন্যদিকে এটি নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক ও উত্তেজনার কারণও হতে পারে।

