রাশিয়ার জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ
বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলির মধ্যে একটি, রাশিয়া বর্তমানে এক ভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে। একদিকে, চলমান যুদ্ধ, অন্যদিকে, রুশ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সন্তানধারণের প্রতি অদ্ভুত অনীহা। এর ফলে দেশটির জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে, এবং এই সমস্যার সমাধানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবার একটি নতুন মন্ত্রক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছেন।
জন্মহার কমে যাওয়ার আশঙ্কা
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে রাশিয়া দীর্ঘ দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। এর ফলে বহু রুশ সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন, এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ছয় লক্ষেরও বেশি হয়ে গেছে। শুধু যুদ্ধ নয়, ২০২০ সালে করোনা মহামারীও রাশিয়ার জন্য এক বড় ধরনের ধাক্কা ছিল। এই দুটি বড় ঘটনা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, তরুণদের মধ্যে সন্তানধারণের প্রতি অনীহা বেড়ে গেছে, যা রুশ সরকারের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সন্তান উৎপাদনের জন্য মন্ত্রকের পরিকল্পনা
এই অবস্থা মোকাবিলায়, পুতিন সরকার এবার একটি নতুন মন্ত্রক তৈরির চিন্তা করছে, যা বিশেষভাবে যুবক-যুবতীদের মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি এবং সন্তানধারণে উৎসাহিত করার কাজ করবে। এই মন্ত্রকটির মূল উদ্দেশ্য হলো—রুশ সমাজে জন্মহার বৃদ্ধির জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। তবে, এই মন্ত্রকটি কার্যকর হতে হলে, দেশটির জনগণের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ায় জন্মহার বর্তমানে ১.৫ জনের নিচে রয়েছে, যা কোনও দেশের স্থিতিশীল জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য, মস্কো সরকার মহিলা প্রতি জন্মহার ২.১ পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
অতীতে গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলি
পুতিন সরকারের আগের পদক্ষেপগুলি যেমন, ‘মাদার হিরোইন’ প্রকল্প—যা সোভিয়েত যুগে চালু ছিল এবং ১৯৪৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল—আজকের দিনে পুনরায় ব্যবহার করা হতে পারে। ‘মাদার হিরোইন’ প্রকল্পের মাধ্যমে, একাধিক সন্তান জন্ম দিলে মহিলাদের নগদ পুরস্কৃত করা হয়।
এছাড়াও, গত বছর পুতিন ১০টি সন্তানের মা হওয়ার পর বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, তবে এর কোন বাস্তবিক ফল পাওয়া যায়নি। এমনকি, মস্কো সরকার গত বছর তরুণদের মধ্যে সন্তানধারণ বাড়ানোর জন্য রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আলো ও ইন্টারনেট বন্ধ করার পরিকল্পনাও করেছিল, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
আরও পদক্ষেপ
এ বছরের সেপ্টেম্বরে পুতিন কর্মক্ষেত্রে সঙ্গমের পরামর্শ দেন, যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মধ্যে শোরগোল ফেলেছিল। এর পাশাপাশি, রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে তরুণদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা চলছে। যেমন, চেলিয়াবিনস্কে ২৪ বছরের কম বয়সী মহিলাদের ৮,৫০০ পাউন্ড (প্রায় ৮ লাখ রুবল) দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, সরকার বিনামূল্যে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষা এবং গর্ভপাত নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপও নিয়েছে। এই সমস্ত পদক্ষেপ আগামী দিনে ‘যৌন মন্ত্রক’-এর অধীনে পরিচালিত হবে।
অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি
বিশ্বের অন্য অনেক দেশও জন্মহারের সমস্যায় ভুগছে। দক্ষিণ ইউরোপের দেশ ইটালি এবং জাপানেও জন্মহার কমছে। সেসব দেশেও তরুণদের সন্তানধারণে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এমনকি, চীনও এক সন্তান নীতি থেকে সরে এসেছে এবং সেখানে বন্ধ্যত্ব বাড়ছে।
উপসংহার
রাশিয়ার মতো দেশের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পুতিন সরকারের নতুন মন্ত্রক এবং অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। তবে, প্রশ্ন উঠছে—এভাবে তরুণদের সঙ্গম এবং সন্তানধারণে উৎসাহিত করা কি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দিতে পারবে, নাকি এটি শুধু একটি অস্থায়ী কৌশল? সময়ই বলে দেবে।